Home » আর্য কারা? আর্যদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

আর্য কারা? আর্যদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

by TRI

আর্য কারা?

আর্য একটি প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী। বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গিরিপথ দিয়ে আর্যরা উপমহাদেশে আগমন করে এবং দ্রাবিড় ও অন্যান্য অনার্য জাতিকে পরাজিত করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ইতিহাসে বহিরাগত এ জাতি আর্য জাতি নামে পরিচিত। আর্য যুগকে বৈদিক যুগ বলা হয়।

আর্যদের সামাজিক জীবন

বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক জীবন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

১) পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সূত্রপাত

পূর্বে আর্যগণ যাযাবরের মতো জীবনযাপন করত। উপমহাদেশে বসতি স্থাপনের পর তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আরম্ভ করে। ঘরবাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আরম্ভ করলে তাদের মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সূত্রপাত হয়।

নবি জীবনের গল্প: আরিফ আজাদ - Nobi Jiboner Golpo: Arif Azad

TK. 290 TK. 203 You Save TK. 87 (30%)

২) পরিবারের প্রধান

বৈদিক আর্যদের সমাজব্যবস্থা ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। পিতামাতা, ভাইবোন, সন্তান সন্ততি ও অন্যান নিকট আত্মীয়দের সমবায়ে পরিবার গঠিত হতো। পিতা ছিলেন আর্য পরিবারের প্রধান। তিনি গৃহকর্তা নামে পরিচিত ছিলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ওপর তার প্রভূত ক্ষমতা ছিল। কয়েকটি পরিবার নিয়ে একটি গোত্র গঠিত হতো।

৩) নারীর স্থান

আর্য সমাজে নারী জাতির উচ্চ মর্যাদা ছিল। তারাই গৃহের কর্ত্রী ছিলেন। বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল না। এক বিবাহ রীতি প্রচলিত ছিল। তবে বহুবিবাহ অজ্ঞাত ছিল না। বিধবাদের পুনঃবিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল।

৪) শ্রেণীস্তর: আর্য সমাজ চার শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ব্রাহ্মণগণ বর্ণশ্রেষ্ঠ এবং শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা পুরোহিতের কাজ করতেন। ক্ষত্রিয়গণ যুদ্ধকার্য পরিচালনা করতেন। শক্তির অধিকারী হিসেবে প্রকৃতপক্ষে তাঁরাই ছিলেন সমাজের সর্বপ্রধান। বৈশ্য বা কৃষক ছিল সমাজের তৃতীয় স্থানের অধিকারী। শূদ্র বা অনার্য সর্ব নিম্নস্তরের ছিল। তাদের স্থান ছিল ক্রীতদাস বা গোলামে এবং তারা সব ধরনের সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।

৫) যুদ্ধপ্রিয় জাতি

আর্যরা ছিল যুদ্ধপ্রিয় জাতি। তারা উন্নত ধরনের অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল।

আরও পড়ুন:  সিন্ধু সভ্যতার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ

৬) খাদ্য

আর্যদের প্রধান খাদ্য ছিল মাংস, যব, গম, দুধ, ঘি, মাখন প্রভৃতি। ড. স্মিথের মতে, “উৎসব অনুষ্ঠানে আর্যরা গো-মাংস ভক্ষণ করত।”

৭) অবসর বিনোদন

আর্যরা স্বভাবত আমোদপ্রিয় জাতি ছিল। তারা নাচ-গান ও জুয়া খেলা ভালোবাসত। সোম ও সুরা ছিল তাদের প্রিয় পানীয়। তাদের সমাজে পাশা খেলার বিশেষ প্রচলন ছিল।

৮) চতুরাশ্রম

‘চতুরাশ্রম বলতে জীবনের চারটি অবস্থা বোঝায়- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। আর্যদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য- এ তিন উচ্চবর্ণকে সামাজিক জীবনে এ চার আশ্রমের কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হতো। ব্রহ্মচর্য জীবনে আর্য বালককে গুরুগৃহে থেকে গুরুর সেবা ও বিদ্যা অর্জন করতে হতো। গার্হস্থ্য জীবনে আর্য যুবক বিবাহ করে সংসারধর্ম পালন করত। বানপ্রস্থ জীবনে সংসার জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে বনে ধর্মচিন্তায় দিন যাপন করতে হতো। সন্ন্যাস জীবনে আর্যকে সংসারের মায়াবন্ধন ত্যাগ করে ভগবানের ধ্যানে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাতে হতো।

আর্যদের রাজনৈতিক জীবন

বৈদিক যুগে আর্যদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হল-

১) রাষ্ট্রের মূলভিত্তি পরিবার

বৈদিক যুগে আর্য রাষ্ট্রের মূলভিত্তি ছিল পারিবারিক জীবন। পরিবারের কর্তাকে গৃহপতি বলা হতো। কতকগুলো পরিবার নিয়ে গ্রাম গঠিত হতো। গ্রামের প্রধানকে বলা হতো গ্রামনী। কতকগুলো গ্রাম নিয়ে একটি ‘বিশ’ গঠিত হতো এবং অনেকগুলো ‘বিশ’ নিয়ে গঠিত হতো জনপদ। বিশ প্রধানকে ‘বিশপতি’ এবং জনপ্রধানকে ‘রাজন’ বলা হতো। প্রত্যেক জন একজন ‘রাজন’ বা অধীশ্বর দ্বারা শাসিত হতো।

২) রাজা বা শাসক নির্বাচন

রাজপদ লাভের বংশানুক্রমিক বা নির্বাচন উভয় প্রক্রিয়াই চালু ছিল। রাজপদগুলো ছিল মূলত বংশানুক্রমিক। তবে কোনো কোনো স্থলে রাজা নির্বাচিত হতেন। নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে জনসাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে রাজপদে অধিষ্ঠিত করতেন।

৩) রাজার কর্মপরিসর

রাজা প্রধানত দুটি দায়িত্ব পালন করতেন। প্রধান বিচারক হিসেবে রাজা তাঁর শাসনাধীন এলাকায় নগর নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করতেন। রাজার অপর দায়িত্ব ছিল শাসনাধীন অঞ্চলের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা। সেসময় আর্য-অনার্য যুদ্ধ অথবা বিভিন্ন প্রতিদ্বন্ধী আর্যগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হতো। যুদ্ধবিগ্রহে রাজা প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করতেন।

৪) সভা ও সমিতি নামক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান

বৈদিক যুগের প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রামনী, সেনানী (সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা), পুরোহিত প্রমুখ পদস্থ লোকের পরামর্শক্রমে রাজা শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। রাজা স্বেচ্ছামূলকভাবে কোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতেন না। সভা ও সমিতি নামক দুটি জনপরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজাকে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হতো। লঘু দায়িত্বসম্পন্ন কাজে যেখানে ত্বরিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হতো সেসব ক্ষেত্রে ‘সভা’ এর সদস্যদের মতামত গ্রহণ ছিল যথেষ্ট। লঘু অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘সমিতি’ এর সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ করা হতো। কিন্তু বৈদিক যুগের শেষপর্যায়ে রাজাগণ প্রায় স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন। তখন ‘সভা’ ও ‘সমিতি’র পরিবর্তে মন্ত্রিসভার প্রবর্তন হয়।

৫) প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

রাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বৈদিক যুগে যুদ্ধবিগ্রহ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। সেনাবাহিনী পদাতিক ও রথারোহী সমন্বয়ে গঠিত হতো। তীর-ধনুক, বর্শা-বল্লম, কুঠার যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

Related Posts