Home » বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী

by TRI

 বাংলাদেশের বিচার বিভাগ মূলত দ্বি-স্তর বিশিষ্ট। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত। উচ্চ আদালত বা সুপ্রীম কোর্ট আবার আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত।

ন্যায়বিচারের মানদন্ডকে সমুন্নত রেখে নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন, শাসক ও শাসিতের সম্পর্ককে সংহত ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্ট নামে একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান বহির্ভূত কোনো বিধানকে অবৈধ ঘোষণা করে শাসনতন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট পথে পরিচালিত হতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইনের শাসনকে অক্ষুণ্ণ রেখে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখবে রাখবে।

সুপ্রীম কোর্টের গঠন কাঠামো

বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত। প্রধান বিচারপতি এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করবেন সেরূপ সংখ্যক বিচারপতি নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট গঠিত হবে। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি “বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি” নামে অভিহিত হবেন। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারক নিয়োগ করবেন। প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারকদের নিয়ে আপিল বিভাগ এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগ ও স্থায়ী বেঞ্চ গঠিত হবে। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ কোনো কারণে শূন্য হলে আপিল বিভাগের জ্যৈষ্ঠতম বিচারক অস্থায়ীভাবে প্রধান বিচারপতির কার্যভার গ্রহণ করবেন। সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতি স্বাধীনভাবে বিচারকার্য করবেন।

সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

যেহেতু বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত, তাই আলোচনার সুবিধার্থে সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে নিম্নোক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত করে আলোচনা করা হলো-

ক. আপিল বিভাগের ক্ষমতা ও এখতিয়ার : বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ নিম্নলিখিত কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে-

১। আপিল সংক্রান্ত: হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি, আদশে বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল, শুনানি ও নিষ্পত্তির অধিকার আপিল বিভাগের রয়েছে। আপিল বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে। এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের ঘোষিত রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতাও রয়েছ আপিল বিভাগের।

২। উপদেষ্টামূলক: আপিল বিভাগের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার রয়েছে। যদি রাষ্ট্রপতি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান, তাহলে আপিল বিভাগ বিষয়টি সম্পর্কে নিজস্ব মতামত রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করে।

৩। পরোয়ানা জারি: ন্যায় বিচারের জন্য প্রয়োজন হলে আপিল বিভাগ কোনো ব্যক্তিকে আদালতের সামনে হাজির হওয়ার এবং কোনো দলিলপত্র দাখিল করার আদেশ দিতে পারেন।

৪। বিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত: সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন সাপেক্ষে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের জন্য এবং অধস্তন আদালতের রীতি ও পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধি প্রণয়ন করতে পারে।

আরও পড়ুন
  বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী
  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি

খ. হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ও এখতিয়ার:

হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ও এখতিয়ার নিচে আলোচনা করা হলো- 

১। স্বপ্রণোদিত (সুয়োমটো) রুল জারি: এটি হাইকোর্ট বিভাগ তথা, বিচারপতিদের এক অনন্য ক্ষমতা। মৌলিক অধিকার রক্ষা, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ, বৈষম্য নিরসন, মানবাধিকার রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ যেকোনো বিষয়ে কোনো অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার বা ঝুঁকি দেখা দিলে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করতে পারে।

২। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা: বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা সাংবিধানিক সুদ্ধতা রক্ষায় যেকোনো দেশের বিচারালয়ের এক অনন্য ক্ষমতা। বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট ১৯৭২ সালে এ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। এ ক্ষমতার বলে জাতীয় সংসদ প্রণীত যেকোনো আইন সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা সুপ্রীম কোর্ট পর্যালোচনা করতে পারে। উক্ত পর্যালোচনায় কোনো আইন সংবিধান পরিপন্থী হলে সুপ্রীম কোর্ট তা বাতিলকরার ক্ষমতা রাখে। এ ক্ষমতা ব্যবহার করেই তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দিয়েছে সুপ্রীম কোর্ট। আবার এ ক্ষমতার বলেই সুপ্রীম কোর্ট পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।

৩। স্বকীয় ক্ষমতা: হাইকোর্ট বিভাগ যে কোনো ব্যক্তির আবেদনক্রমে আইনসম্মত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে প্রহরায় আটক ব্যক্তিকে হাইকোর্ট বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করতে পারে।

৪। মৌলিক অধিকার রক্ষা: সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহের কোনো একটি বলবৎ করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলির সাথে সম্পর্কিত কোনো দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিসহ যেকোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত নির্দেশ বা আদেশ দিতে পারে।

৫। তত্তাবধান ও নিয়ন্ত্রণ: হাইকোর্টের কিছু কিছু তত্তাবধান ও নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা রয়েছে। হাইকোর্ট তার অধীন সকল আদালতের কার্যক্রম তত্তাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৬। বিতর্কিত কাজ বন্ধ বা চলার নির্দেশ: হাইকোর্ট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে কোনো ব্যক্তিকে অনুমোদিত কার্য হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দিতে পারে।

অন্যান্য ক্ষমতা ও কার্যাবলী : সুপ্রীম কোর্ট আরও যেসব কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে-

প্রধান বিচারপতি বা তার নির্দেশক্রমে অন্য কোনো বিচারক বা কর্মচারী সুপ্রীম কোর্টের কর্মচারীদের নিযুক্ত করবেন। জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত বিধান সাপেক্ষে সুপ্রীম কোর্টের বিধি অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের কর্মকর্তাদের কর্মের শর্তাবলী নির্ধারিত করে থাকে।

সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকারক। তাই এর ক্ষমতা ও কার্যাবলী অপরিসীম। সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সুপ্রীম কোর্ট দেশের সকল আদালতের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সংবিধান বহির্ভূত সব কিছুকেই সুপ্রীম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করার ক্ষমতা রাখে। এককথায় সুপ্রীম কোর্ট হলো জনগণের মৌলিক অধিকারের সংরক্ষক এবং সংবিধানের রক্ষক।

Related Posts