বাংলাদেশের রাজনীতির সামরিকীকরণ প্রক্রিয়া
সামরিকীকরণ প্রক্রিয়া
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু পর হতে ১৯৯০ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বমোট ৪ বার সামরিক শাসনের আদেশ জারি করা হয়।
প্রথম পর্যায়: ১৯৭৫ সালের ২৩ই আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক জারিকৃত এক আদেশবলে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সামরিক আইন কার্যকর করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়: প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ৮ নভেম্বর ১৯৭৫ এ এক জারিকৃত আদেশবলে দেশে সামরিক আইন জারি করেন এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা করেন।
তৃতীয় পর্যায়: মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ২৯ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে সামরিক আইন জারি করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ৬ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকে।
চতুর্থ পর্যায়: লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে প্রথমবারের মত দেশে সামরিক আইন জারি করেন এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৪ নভেম্বর ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দেশে সামরিক আইন কার্যকর থাকে।
তাছাড়া ১ লা নভেম্বর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ছিল একটি পুতুল সরকার যার নেপথ্যে সেনাবাহিনীই ছিল প্রকৃত শাসক।
আরও পড়ুন: ভারতের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ না হওয়ার কারণসমূহ
পাকিস্তানের রাজনীতির সামরিকীকরণ প্রক্রিয়া
১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশের ইতিহাসে বিরল।
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সর্বপ্রথম সামরিক আইন জারি করেন। ১৯৫৮ সালের ২৭শে অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সর্বপ্রথম সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হন। যদিও তিনি পরবর্তীতে তার সাজানো মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে পুনরায় সামরিক শাসন জারি করেন। এর পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে আবারও সামরিক শাসন জারি করা হয়। আর এই সামরিক অভ্যুত্থানের হাত ধরে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়াউল হক। এর পরে জুলফিকার আলী ভূট্টোকে ফাঁসি প্রদানের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটে। সর্বশেষ জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসাবে ক্ষমতায় আসেন। ২০০৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত মূলত এ সামরিক শাসনই পাকিস্তানে পরিচালিত ছিল।