ম্যাকগ্রেগর এর X ও Y তত্ত্ব
প্রখ্যাত মার্কিন চিন্তাবিদ Douglas McGregor তাঁর The Human Side of Enterprise গ্রন্থে মানুষের প্রকৃতি ও আচরণ এবং মানসিকতার উপর ভিত্তি করে X ও Y তত্ত্ব প্রদান করেন। এর একটি X তত্ত্ব এবং অপরটি Y তত্ত্ব নামে পরিচিত। X তত্ত্বে তিনি এক শ্রেণীর মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও আচরণকে ইতিবাচক দিক থেকে বিবেচনা করেছেন। ম্যাকগ্রেগর প্রদত্ত দুটি তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানব সম্পদের ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন প্রকৃতির অবস্থা ফুটে উঠে। এক্ষেত্রে তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো ব্যবস্থাপকগণ তাঁর অধস্তনদের যে দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করবেন তাদের নিকট থেকে কাজ আদায়ে তারা সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিম্নে উক্ত দুটি তত্ত্বের ধারণা সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো:
১) X-তত্ত্ব (Theory-X)
এ তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থাপকগণ কর্তৃক অধস্তন কর্মীদের অবজ্ঞা করা হয়। এক্ষেত্রে অধস্তন কর্মীদের মনমানসিকতা অত্যন্ত নিম্নমানের বলে বিবেচনা করা হয়। তাই তাদের নিকট থেকে কাজ আদায়করণে নিয়ন্ত্রণমূল ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া হয়। S. P. Robbins এবং M. Coulter-এর ভাষায়, “Theory `X’ is the assumption that employees dislike work, are lazy, seek to avoid responsibility and must be coerced to perform. অর্থাৎ, “X” তত্ত্বের ধারণা এরূপ যে কর্মীরা কাজ অপছন্দ করে, অলস ও দায়িত্ব এড়িয়ে চলে এবং তাদেরকে কার্যসম্পাদনে বাধ্য করতে হয়।
ম্যাকগ্রেগর প্রদত্ত এ তত্ত্ব অনুযায়ী কর্মীদের আচরণ সম্পর্কে যে ধারণা করা হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ক) মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি যে, তারা কাজকে অপছন্দ করে এবং সুযোগ পেলে কাজ ও দায়িত্ব এড়িয়ে চলে।
খ) যেহেতু মানুষের কাজের প্রতি অনীহা রয়েছে সেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনে শাস্তি প্রয়োগের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের নিকট থেকে কাজ আদায় করিয়ে নিতে হয়।
গ) সাধারণত মানুষ দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে চায়, তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কম ও নিরাপত্তার অভাববোধ করে।
ঘ) সাধারণত মানুষ বরাবরই নির্দেশিত ও নিয়ন্ত্রিত হতে চায়।
ঙ) সাধারণত মানুষের নতুন ধ্যান-ধারণা গ্রহণের ক্ষমতা খুবই কম এবং তারা পরিবর্তনকে সহজে মেনে নিতে চায় না।
চ) কর্মীর সততার অভাব আছে এবং তারা স্বভাবতই অলস এবং কর্ম ও উদ্যোগ গ্রহণে অনুৎসাহী।
আরও পড়ুন: আব্রাহাম মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব – মানুষের পাঁচ ধরণের চাহিদা বা অভাব
২) Y-তত্ত্ব (Theory-Y)
এ তত্ত্বে অধস্তন কর্মীদের যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে কর্মীদের ব্যবস্থাপনার অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর কর্মীদের নিকট থেকে কাজ আদায়করণে ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু কার্যপরিবেশ নিশ্চিতকরণের উপর সমধিক গুরুত্বারোপ করে। S. P. Robbins এবং M. Coulter এ তত্ত্ব সম্পর্কে বলেন, “Theory ‘y’ is the assumption that employees are creative, seek responsibility and can exercise self-direction.” অর্থাৎ, ‘Y’ তত্ত্বের ধারণা এরূপ যে কর্মীরা সৃষ্টিশীল দায়িত্ব পেতে চায় এবং আত্মনির্দেশনা অনুশীলন করতে পারে। McGregor- এর দৃষ্টিতে Y তত্ত্বের ব্যবস্থাপনা অধস্তন কর্মীদের সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করে তা নিম্নরূপ:
ক) কার্যপরিবেশ অনুকূল থাকলে মানুষ সাধারণত খেলার মতোই কাজে দৈহিক ও মানসিক প্রচেষ্টা চালায়।
খ) প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনে উৎপাদনের জন্য, শুধু কর্মীদেরকে বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ এবং শাস্তির ভয়-ভীতি দেখানো হয় না, বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকলে উদ্দেশ্য অর্জনে তারা নিজেরাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা প্রদান করবে।
গ) উদ্দেশ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতির মাত্রা এবং পুরস্কারের প্রকৃতির অনুপাতের উপর ভিত্তি করে মানুষ তাদের উদ্দেশ্য অর্জনে পরস্পর সম্পৃক্ত হয়।
ঘ) বিশেষ শর্তের অধীনে মানুষ শুধু দায়িত্বই গ্রহণ করে না, বরং তারা দায়িত্ব খুঁজেও বেড়ায়।
ঙ) সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানে সামর্থ্য প্রয়োগ করতে উচ্চমাত্রার কল্পনা শক্তি ও সৃজনশীল শক্তির ব্যাপক প্রয়োজন। তাই জনগণের মাঝে ক্ষমতা সেভাবেই বন্টন করতে হবে।
চ) আধুনিক শিল্পজীবনে একজন সাধারণ মানুষের জ্ঞান ও কর্মদক্ষতার মাত্র সামন্য অংশই কাজে লাগানো সম্ভব।
নিচের ছকে X ও Y তত্ত্ব এর মূল বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
X তত্ত্ব | Y তত্ত্ব |
১) সাধারণভাবে মানুষের নিকট কাজ অপছন্দনীয়। | ১) সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্মীর অংশগ্রহণ প্রণোদনামূলক।২ |
২) সাধারণভাবে মানুষের সততার অভাব রয়েছে এবং তারা স্বভাবতই অলস ও কাজে অনুৎসাহী। | ২) মানুষ কাজ পছন্দ করে এবং কাজকে বিশ্রাম ও খেলার মতোই স্বাভাবিক মনে করে। |
৩) সাধারণভাবে লোকেরা দায়িত্ব এড়াতে চায় এবং কাজে কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে অনাগ্রহী। | ৩) কর্মীরা স্ব-উদ্যোগে চলতে আগ্রহী এবং সৃজনীশক্তির বিকাশ ঘটাতে চায়। |
৪) সাধারণভাবে লোকের নতুন ধারণা গ্রহণের ক্ষমতা খুবই কম এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা খুবই কম। | ৪) কর্মী দায়িত্ব গ্রহণ ও পালনে আগ্রহী এবং স্বীকৃতি প্রত্যাশা করে। |
৫) অধিকাংশ লোক ঘনিষ্ঠভাবে নির্দেশিত হতে চায় এবং দায়িত্ব গ্রহণে অনিচ্ছুক। | ৫) অধস্তনদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া হলে জৈবিক, সাময়িক ও আত্মপরিতৃপ্তি অর্জন করতে পারে। |
৬) লোকেরা আর্থিক নিরাপত্তা পেতে অধিক আগ্রহী এবং তারা নিয়ন্ত্রিত হতে চায়। | ৬) এ তত্ত্ব কর্মীর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করে তার উন্নয়ন ঘটায়। |
৭) ভীতি প্রদর্শনের দ্বারা কর্মীদের কাজ করিয়ে নিতে হয়। | ৭) এ তত্ত্ব সংগঠনে কর্তৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণের পক্ষপাতি। |