নির্ভরতা তত্ত্ব (Dependency Theory)
নির্ভরতা তত্ত্ব ১৯৬০ এর দশকে জার্মান-আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী Andre Gunder Frank কর্তৃক উদ্ভব হয়। একে নির্ভরশীলতা তত্ত্বও বলা হয়।
ফ্রাঙ্ক এর মতে, তৃতীয় বিশ্বের চলমান দারিদ্র্যের পেছনে রয়েছে নির্ভরতার প্রতিফলন। তিনি এটিকে নির্ভরতার শৃঙ্খল হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটি পরিচালিত হয় উন্নত কিছু দেশ থেকে যাদেরকে তিনি মেট্রোপলিস হিসেবে অভিহিত করেছেন। এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে স্যাটেলাইট হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ফ্রাঙ্ক ব্যাখ্যা করে বলেন যে, প্রয়োজনীয় শিল্প উন্নয়নের অভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সম্পদ সমূহ মেট্রোপলিটান কেন্দ্রে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: হার্জবার্গের দ্বি-উপাদান তত্ত্ব – প্রেষণা তত্ত্ব
নির্ভরতার কারণ সমূহ
১) মূলধনের স্বল্পতা
২) শিল্পোন্নয়নের অভাব
৩) অর্থনৈতিক সম্পদের অভাব, যেমন- অবকাঠামো, প্রযুক্তি, দক্ষতা ইত্যাদি।
নির্ভরতা তত্ত্বের তাত্ত্বিকদের মূল যুক্তি হল ল্যাটিন আমেরিকার পুঁজিবাদী দেশসমূহ বিশেষ করে যেগুলো শিল্পোন্নত সেসব দেশের উন্নয়নের পেছনে অশিল্পোন্নত দেশ সমূহের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের কৃষকেরা ভূমির মালিক কর্তৃক শোষিত হচ্ছে এবং তারা যে পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করে সে পরিমাণ শ্রমের দাম পায় না। জমির মালিক পণ্যসমূহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে এবং শহরে পণ্যগুলো উচ্চমূল্যে বিক্রয় হয়। ফলে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। অর্থাৎ, ধারাক্রমটি নিম্নরূপ:
কৃষক → জমির মালিক → স্থানীয় ব্যবসায়ী → আঞ্চলিক এজেন্ট → জাতীয় পর্যায়
সুপারিশ
নির্ভরতা তত্ত্বের কিছু সুপারিশ নিম্নে প্রদান করা হলো-
১) তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের উচিত পুঁজিবাদী মেট্রোপলিসিস দেশসমূহের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
২) নিজস্ব স্বার্থ বজায় রেখে আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বজায় রাখা এবং দেশকে শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
সমালোচনা
উন্নয়ন সংঘটিত হওয়ার পেছনে যে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয় জড়িত তা নির্ভরতা তত্ত্বের তাত্ত্বিকরা বিবেচনা করেন নি।