Home » রাজনৈতিক দল ও স্বার্থ গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য

রাজনৈতিক দল ও স্বার্থ গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য

by TRI

নিম্নে রাজনৈতিক দল ও স্বার্থ গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হল- 

উৎপত্তিগত পার্থক্য

সুনির্দিষ্ট মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে। এ মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী পালিত হয়। পক্ষান্তরে স্বার্থগোষ্ঠী কোন মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না।

উদ্দেশ্যগত পার্থক্য

রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা করা। এ দল সকল মানুষের কল্যাণ সাধনে কাজ করে যায়। কিন্তু স্বার্থগোষ্ঠী জাতীয় কোন স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে গোষ্ঠী ভিত্তিক কল্যাণ সাধন করে থাকে। তাদের উদ্দেশ্য ছোট ছোট স্বার্থ রক্ষা করা।

সংহতিগত পার্থক্য

প্রত্যেক রাজনৈতিক দলে স্বার্থ গোষ্ঠীর সদস্য থাকে। তাই তাদের মধ্যে সংহতি থাকা আবশ্যক। কিন্তু স্বার্থ গোষ্ঠীর মধ্যে এমন সংহতি দেখা যায় না।

সাংগঠনিক পার্থক্য

রাজনৈতিক দলগুলো সুসংগঠিত। বিভিন্ন সাংগঠনিক সদস্যদের নিয়ে এদল গঠিত। কিন্তু সাংগঠনিক দিক দিয়ে স্বার্থগোষ্ঠী রাজনৈতিক দলের তুলনায় অনেক দূর্বল।

নির্বাচন প্রশ্নে

রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু স্বার্থ গোষ্ঠী প্রার্থী দিতে পারে না। তবে পরোক্ষভাবে তাদের পছন্দমত দলের পক্ষে প্রচারণা চালায়।

কল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রে

জনগণের কল্যাণ সাধন রাজনৈতিক দলের প্রধান উদ্দেশ্য। রাজনৈতিক দল কোন গোষ্ঠী বা শ্রেণীগত স্বার্থের কথা না ভেবে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু দলগত স্বার্থ সংরক্ষণ করাই স্বার্থ গোষ্ঠীর প্রধান কাজ।

আরও পড়ুন:  রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণ কি? রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণের মধ্যে পার্থক্য

আদর্শ বাস্তবায়ন

রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হল ক্ষমতা হস্তগত করার মাধ্যমে নিজেদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়ন করা। স্বার্থ গোষ্ঠী কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণ বা স্বীয় নীতি ও অঅদর্শ বাস্তবায়নে তৎপর নয়। তাদের উদ্দেশ্য হল সরকারি সিদ্ধান্তের উপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা।

আবশ্যকতার প্রশ্নে

প্রতিটি শাসন ব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক দল প্রয়োজন কিন্তু সকল শাসন ব্যবস্থায় স্বার্থ গোষ্ঠীর অবস্থান লক্ষ্য করা যায় না।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে

রাজনৈতিক দলের সদস্যরা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করে। রাজনৈতিক দল খুব সহজে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাক্কালে তাদের সবসময় জনগণের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করতে হয়। অনেক সময় বিভিন্ন স্বার্থ গোষ্ঠীর দিকে নজর রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু স্বার্থ গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এ ধরণের জটিলতা নেই।

রাজনৈতিক মোর্চা গঠন

সমভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলসমূহ বিশেষ কারণ এবং ক্ষেত্রবশতঃ রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের মাধ্যমে সরকারি ক্ষমতা হস্তগত করতে পারে, কিন্তু স্বার্থ গোষ্ঠীর যেহেতু রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্জন করা উদ্দেশ্য নয়, তাই মোর্চা গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না।

অভ্যন্তরীণ

অনেক সময় সদস্য ও কর্মীবৃন্দের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় দলের মধ্যে ভাঙন ধরে। একটি দল ভেঙে বিভিন্ন উপদলের সৃষ্টি হতে পারে। স্বার্থ গোষ্ঠী যেহেতু সংকীর্ণ স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট এবং সদস্য সংখ্যাও কম, তাই তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের অবকাশ খুব কম থাকে।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অনেক ক্ষেত্রে স্বার্থগোষ্ঠী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করে থাকে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক দল ও স্বার্থ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করা কঠিন হয়।

Related Posts