রাজনীতিকরণ কি?
রাজনীতিকরণ একটি বৈধ, সাংবিধানিক ও ধনাত্মক ধারণা। সরকার তার সকল কাজ ও নীতিমালা প্রণয়ন করবে রাজনৈতিকভাবে, যেখানে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ নয়, বরং এসব নীতি সকল নাগরিকের জন্য সমানভাবে বিবেচিত হবে। তেমনি প্রশাসনে রাজনীতিকরণ হবে, যেহেতু প্রশাসন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সকল কাজের সাথে জড়িত।
হারুন-অর-রশিদ তাঁর ‘রাজনীতি কোষ’ গ্রন্থে বলেছেন, “কোন ঘটনা বা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি রূপ বা চরিত্র দান করাকে রাজনীতিকরণ বলা হয়।”
প্রশাসনের সুষ্ঠু, স্বচ্ছ সাংবিধানিক আইন দ্বারা যদি প্রশাসন তার স্ব স্ব কাজ করে যেতে পারে তাহলে সেই প্রশাসনে রাজনীতিকরণ হয়েছে বলা যায়। কেননা সরকারের নীতি প্রণয়ন সহায়তা ও বাস্তবায়ন করে প্রশাসন।
অর্থাৎ, যে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মন্ত্রী ও আমলা একত্রে মিলিত হয়ে জনকল্যাণমূলক নীতি প্রণ প্রণয়ন করেন কোন প্রকার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট না হয়ে, তাকেই আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণ বলা হয়।
দলীয়করণ কি?
যখন প্রশাসনের সকল কাজের ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থ বা ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয় তখন তাকে দলীয়করণ বলা হয়।
প্রশাসনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে আমলারা। তাই প্রশাসনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন সকল দিক দিয়ে যোগ্য ও দক্ষ লোকের নিয়োগ প্রদান যারা নিজস্ব মেধা-মননে প্রচলিত আইনানুযায়ী কার্যাবলি সম্পাদন করে যাবে। কিন্তু যোগ্যতার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিভাবানদেরকে যদি রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হবার বদৌলতে প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও অন্যান্য উপায়ে নিযুক্ত করা হয়, তখন তা দলীয়করণের মধ্যে পড়ে।
সুতরাং বলা যায়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতা, সততা, কর্মনিষ্ঠা, নিরপেক্ষতাকে পাশ কাটিয়ে দলীয় আনুগত্য ও চাটুকারিতার মাধ্যমে যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তখন তাকে দলীয়করণ বলা হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণের কারণ ও প্রভাব
রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণের মধ্যে পার্থক্য
রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণ দুটি আলাদা বিষয়। নিম্নে এদের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হল-
১) রাজনীতিকরণ হয় সকলের জন্য যেখানে কোন নির্দিষ্ট দল বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থলাভ হয় না।
অন্যদিকে, দলীয়করণ হয় নির্দিষ্ট কিছু দল বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার্থে।
২) রাজনীতিকরণ বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে হয়ে থাকে।
আর দলীয়করণ হয় রাজনৈতিক আশ্রয়ে অসাংবিধানিকভাবে।
উদাহরণ
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) নিয়োগে যে কোটা পদ্ধতি সেটি রাজনীতিকরণের আওতায় পড়ে। কারণ, এই আওতাভুক্তকরণের মাধ্যমে সকল নাগরিকের সম অধিকার রক্ষা করা হয়।
কিন্তু যদি এই কোটার মধ্যকার প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যতম প্রার্থীর বদলে দলীয় লোক নিয়োগ করা হয় তবে সেটি হবে দলীয়করণ।
আবার, যদি সরকার দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য চাকরি প্রদানের ঘোষণা দেয়, সেটি রাজনীতিকরণের মাধ্যমে হবে। কিন্তু এই প্রেক্ষিতে যদি সরকারি দল শুধুমাত্র নিজ দলীয় বেকারদের তালিকা প্রস্তুত করে তবে তা হবে দলীয়করণের নামান্তর।