মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন মানব সম্পদ গঠন করে এদের যথাযথভাবে দায়িত্ব সম্পাদনের উপযাগী সঠিক পরিচালনা ও এর কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মূলকাজ। এ লক্ষ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে দক্ষ কর্মী সংগ্রহ, বাছাই ও নিয়োগদান, কর্মীদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো, কর্মীদের কাজের প্রতি প্রেরণা সৃষ্টির লক্ষ্যে যথেষ্ট প্রণোদনা দান, কর্মীদের সংরক্ষণ তথা প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার লক্ষ্যে বিবিধ কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ উন্নত কার্যপরিবেশ সৃষ্টি করা সম্পর্কিত নানাবিধ কার্যাদি সম্পাদন করতে হয়। সুতরাং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী মূলত চারটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। উপাদানসমূহ হলো- ১) সংগ্রহ বা অর্জন; ২) উন্নয়ন; ৩) প্রেষণা এবং ৪) সংরক্ষণ।
১) মানব সম্পদের অর্জন বা সংগ্রহ
প্রতিষ্ঠানে কর্মীর চাহিদা ও সরবারাহের প্রাক্কলনের সাথে মানব সম্পদ সংগ্রহ বিষয়টি সম্পর্কিত। প্রতিষ্ঠানের সৃষ্ট ও শূণ্যপদ পূরণে কর্মীর আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে আবেদনপত্র গ্রহণ থেকে শুরু করে নিয়োগ ও স্থাপনা বা পদায়ন এবং পরিচিতি করানো পর্যন্ত যাবতীয় কাজ মানব সম্পদ সংগ্রহের আওতায় পড়ে। নিম্নে মানব সম্পদ সংগ্রহ সংক্রান্ত কার্যাবলি আলোচনা করা হলা-
ক) মানব সম্পদ পরিকল্পনা
প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ মানব সম্পদের চাহিদা নিরূপণের প্রক্রিয়াকে মানব সম্পদ পরিকল্পনা বলা হয়। মানব সম্পদ পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনাকে উপযুক্ত পদে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত লোক নিয়োগে সাহায্য করে। এর ফলে ফলপ্রসূ উপায়ে ও দক্ষতার সাথে কার্যসম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
মানব সম্পদ পরিকল্পনার কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কার্যের প্রকৃতি ও পরিমাণের ভিত্তিতে কি ধরনের কত সংখ্যক কর্মী কখন প্রয়োজন হবে তা দক্ষতার সঙ্গে নির্ধারণ করা। অতএব যোগ্যতা যাচাইপূর্বক সঠিক কাজে সঠিক কর্মী নিয়োগ, কর্মীর ভবিষ্যৎ প্রয়োজন ও সংখ্যা নিরূপণ, কর্মীর বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ প্রভৃতি মানব সম্পদ পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত।
খ) কার্য বিশ্লেষণ
কার্যবিশ্লেষণ দ্বারা প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের কাজের প্রকৃতি, দায়িত্ব-কর্তব্য, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জামসহ কর্মীর প্রশিক্ষণ, পারিশ্রমিক, পদোন্নতি, কারখানার অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। কার্য বিশ্লেষণের সাহোয্যে কর্মীর কাজের তালিকা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পকির্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়।
কার্য বিশ্লেষণের সাহায্যে কার্যসম্পর্কিত তথ্য লাভ করে কার্য বিবরণী, কার্য নির্দিষ্টকরণ এবং কার্য মূল্যায়ন পরিচালনায় উক্ত তথ্যসমূহকে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানে কর্মীর ধরন চিহ্নিত করা, কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন ও উন্নয়নে সহায়তা লাভ করে। এছাড়াও কার্যবিশ্লেষণ, প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন, কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন এবং ক্ষতিপূরণ প্রশাসন সম্পর্কিত বিষয়সমূহের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দানকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে।
গ) কর্মী সংগ্রহ
সংগঠন কাঠামো অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্মীর চাহিদা পূরণকল্পে সৃষ্ট ও শূণ্যপদে সম্ভাব্য কর্মীকে আকৃষ্ট করে আবেদনে আগ্রহী করে তোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকে কর্মী সংগ্রহ বলে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীর চাহিদা মোতাবেক কর্মীর উৎস খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন প্রার্থীদের চাকরি লাভে আগ্রহী করে তোলার প্রক্রিয়া হচ্ছে কর্মী সংগ্রহ।
সর্বাপেক্ষা যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ করাই হবে কর্মী সংগ্রহের মূলনীতি। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মী সংগ্রতের বিভিন্ন উৎস সম্পর্কে অবহিত হয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী সংগ্রহের লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। কর্মী সংগ্রহের উৎস মূলত দুইটি। যথা- ১) অভ্যন্তরীণ উৎস (যেমন- পদোন্নতি, বদলি, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী কর্মী, কর্মীদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশ, শ্রমিক সংঘের সুপারিশ ইত্যাদি) এবং ২) বাহ্যিক উৎস (যেমন- প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস অর্থাৎ চাকরি বিনিয়োগ কেন্দ্র, পেশাগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নিয়োগ প্রতিনিধি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন, চাকরি সন্ধানী ব্যক্তি, প্রাক্তন ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, অনাহূত আবেদনপত্র, মেধা শিকার ইত্যাদি।)
উপরিউক্ত বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় এবং যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজে বের করে প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট ও শূণ্যপদ পূরণার্থে আবেদন করার জন্য আকৃষ্ট ও অনুপ্রাণিত করে তোলার পদ্ধতি হচ্ছে কর্মী সংগ্রহ।
ঘ) কর্মী নির্বাচন
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক উৎস থেকে শূন্য পদের জন্য সংগৃহীত আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে চূড়ান্তভাবে বাছাই করার প্রক্রিয়াকে কর্মী নির্বাচন বলে। কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি কর্মী নির্বাচনের আওতাভূক্ত। তাই কর্মী নির্বাচন কেবলমাত্র নতুন কর্মী নিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরাতন কর্মীদের পদোন্নতি, বদলি, পদাবনতি এবং পদচ্যুতি বা ছাঁটাইয়ের জন্য কর্মী নির্বাচন হতে পারে।
আরও পড়ুন: মানব সম্পদ পরিকল্পনা কি? মানব সম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কি কি?
কর্মী সংগ্রহ ও কর্মী নির্বাচন পরস্পর সম্পর্কিত। প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট বা শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগই কর্মী নির্বাচনের মূখ্য উদ্দেশ্য। নতুন কার্যে সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা আছে এরুপ কর্মী নির্বাচন করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে উপযুক্ত দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নির্বাচন কর হয়।
উপযুক্ত কর্মী নির্বাচনে শিক্ষাগত ও কারিগরি যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা, দায়িত্ব, উদ্যোগ, ব্যক্তির স্বাস্থ্য ইত্যাদি যাচাই করা হয়। সঠিক কর্মী নির্বাচন, পুনঃস্থাপন ও প্রশিক্ষণের খরচ কমায়, আইনগত চ্যালেঞ্জ কমায় এবং অধিক উৎপাদনশীল কর্মশক্তির যোগান দেয়। কর্মী নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আবেদনপত্র গ্রহণ ও বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা, অতীত অনুসন্ধান, শারীরিক পরীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে চূড়ান্ত নির্বাচন করে কর্মীদের সঠিক স্থানে ও সঠিক সময়ে নিয়োগ ও পদায়নের বা স্থাপনার ব্যবস্থা করা হয়।
ঙ) কর্মী সামাজিকীকরণ বা পরিচিতিকরণ
নতুন কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের সাথে খাপ-খাওয়ানোর প্রক্রিয়া হচ্ছে সামাজিকীকরণ। নতুন কর্মী নির্বাচন করে নির্দিষ্ট পদে নিয়োগ বা স্থাপনার পর তাকে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মীদের সাথে এবং পদ, কার্য ও কার্যপদ্ধতি, রীতিনীতি, সংগঠনের পরিবেশ ইত্যাদির সাথে পরিচিত করে তোলা এবং খাপ-খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাকে কর্মী সামাজিকীকরণ বা পরিচিতকরণ বলে।
অবহিতকরণ বা ওরিয়েন্টেশন এর মাধ্যমে কর্মীদের সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিষয়ের সাথে নবনিযুক্ত কর্মীকে পরিচয় করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এরূপ সামাজিকীকরণ প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীর আগ্রহ বৃদ্ধি করে ও সহযোগিতা আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এটি কর্মীর সফল কার্যসম্পাদনের সহায়ক।
২) মানব সম্পদের উন্নয়ন
প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনশীলতা, নতুন নতুন কার্যপদ্ধতি ও ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মীর জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। কর্মী সংগ্রহ সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদনের পর পরই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মী উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। কর্মীর কার্যদক্ষতার উন্নয়ন ও মনোভাবের পরিবর্তন সাধন করে কর্মে আত্মনিয়োগের লক্ষ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে ব্যাপক কর্মী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। নিম্নে মানব সম্পদ উন্নয়নের কার্যাবলিসমূহ আলোচনা করা হলো-
ক) কর্মী প্রশিক্ষণ
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের নবনিযুক্ত ও অভিজ্ঞ কর্মীদের জ্ঞান, দক্ষতা ও মনোভাব উন্নয়ন ও বৃদ্ধির জন্য এবং অপচয় নিরসন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকল্পে যে সংগঠিত প্রক্রিয়ায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে তাকে প্রশিক্ষণ বলে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের কাজে উৎসাহ বৃদ্ধি, পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মনোভাব ও আচরণের পরিবর্তনের জন্য শিক্ষাদান করা হয়। প্রশিক্ষণ কর্মীর কাজে আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে। পেশাগত বিষয় সম্পর্কে হাতে-কলমে জ্ঞান ও শিক্ষা দেয়, কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধি করে কার্যসম্পাদনের দক্ষতা ও উৎকর্ষ সাধনে সহায়তা করে এবং উৎপাদন ও উৎপাদকি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রণয়ন করে বিভিন্ন কৌশল কর্মীদের কাজের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে। এরূপ প্রশিক্ষণ পদ্ধতিসমূহ হলো- হাতেকলমে শিক্ষা, শিক্ষানবীশী, কার্যনির্দেশনা, প্রবেশিকা শিক্ষাগৃহ ইত্যাদি। এবং কাজের বাহিরে প্রশিক্ষণ পদ্ধতি হচ্ছে- অনুকরণ ও তথ্যপ্রদান পদ্ধতিতে লেকচার, কনফারেন্স, কর্মসূচি নির্দেশনা, ছবি প্রদর্শন, সাইমুলেশন অনুশীলন, রোলপ্লে, ভেস্টিবল প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে ব্যক্তিক ও দলীয় সহযোগিতা ও সংবেদনশীলতার উন্নতি সাধন করা হয়।
খ) ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন
কর্মী উন্নয়নের সাথে সাথে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত নির্বাহীদের ধারণগত ক্ষমতা, জ্ঞান আহরণ, সাংগঠনিক ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা, আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা, সমস্যা নির্ণায়ক দক্ষতা, যোগাযোগ নৈপুণ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা ইত্যাদির উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়। ব্যবস্থাপকীয় নৈপুণ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধি করাই ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মুখ্য উদ্দেশ্য।
অধিকতর ভবিষ্যৎমুখী এবং শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন বলে। কাজের অভ্যন্তরে ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কৌশলসমূহ হচ্ছে- কোচিং, পর্যবেক্ষণ, পদ আবর্তন এবং কমিটির সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ কাজের বাইরের কৌশলসমূহ হচ্ছে- অনুভূতিপ্রবণ প্রশিক্ষণ, ট্রানজেকশনাল বিশ্লেষণ, লেকচার বা বক্তৃতা পদ্ধতি, ঘটনা পর্যালোচনা, ব্যবস্থাপনা ক্রীড়া, সাইমুলেশন ইত্যাদি।
গ) ক্যারিয়ার বা পেশা উন্নয়ন
ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক চাহিদার আলোকে কর্মজীবনের অগ্রগতির ধারাবাহিক ও অবিরাম প্রচেষ্টাকে ক্যারিয়ার বা পেশা উন্নয়ন বলা হয়ে থাকে। কর্মীর ক্যারিয়ার উন্নয়নের লক্ষ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এজন্য কর্মীর ভবিষ্যৎ উন্নতির নিশ্চয়তা থাকলে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মে আত্মনিয়োগ করে। কর্মীর দক্ষতা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, আচার-আচরণ, কাজের প্রতি আগ্রহ ইত্যাদি বিবেচনাপূর্বক কর্মীর পর্যায়ক্রমিক উন্নতিবিধান বা ক্যারিয়ার উন্নয়নের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এর ফলে কর্মীর মধ্যে প্রণোদনার সৃষ্টি করে মনোবলের উন্নতি ঘটায়।
ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনার সমন্বয়ে ক্যারিয়ার উন্নয়ন সাধিত হয়। ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যারিয়ার উন্নয়নকে দেখা হয়ে থাকে। ক্যারিয়ার উন্নয়নের স্তরসমূহ হচ্ছে নিয়োগ প্রস্তুতি বা অনুসন্ধান স্তর, প্রতিষ্ঠা বা সংস্থাপন স্তর, মধ্য কর্মজীবন বা ক্যারিয়ারের মধ্যস্তর, শেষ কর্মজীবন বা ক্যারিয়ারের শেষস্তর এবং প্রত্যাহার বা অবনতি স্তর।
৩) মানব সম্পদের প্রেষণা বা প্রণোদনা
প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্মীদের কার্যসম্পদনে উৎসাহিত, প্ররোচিত ও অনুপ্রাণিত করে তোলার প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলে। প্রেষণা কর্মীর কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মনিয়োগে সহায়ক। কাজের প্রতি কর্মী আগ্রহ বা ইচ্ছাকে জাগ্রত করাই প্রেষণার লক্ষ্য। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে যথাযথ প্রেষণা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কর্মীদের কার্যে স্বতঃস্ফূর্ত আত্মনিয়োগের আগ্রহ ও ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টার সৃষ্টি করতে হবে।
আরও পড়ুন: মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আলোচনা কর।
আর্থিক ও অনার্থিক প্রেষণাদানের মাধ্যমে কর্মীদের উন্নত মনোবল গঠন করা হয়। এর ফলে কর্মীর উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি পায়। কর্মীর ফলপ্রসূ কার্যসম্পাদনে কতিপয় বাহ্যিক উপাদান যেমন- কার্য ডিজাইন, কার্য শর্ত, চাকরির নিরাপত্তা, তত্ত্বাবধান ইত্যাদি সন্তোষজনক হতে হয়। তেমনি সাফল্য অর্জন, স্বীকৃতি, দায়িত্ব প্রদান ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ উপাদানের উপস্থিতি থাকা আবশ্যক। অন্যান্য যেসব বিষয় কর্মীর প্রেষণাকে প্রভাবিত করে তা হচ্ছে কার্যসম্পাদন, মূল্যায়ন, পুরস্কৃতকরণ, ক্ষতিপূরণ, প্রশাসন, সুবিধাদি প্রদান এবং কর্মক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। প্রেষণা সংক্রান্ত কার্যাবলিগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
ক) কার্য ডিজাইন
কার্য ডিজাইন বা পরিকল্পনা হচ্ছে এমন একটি পন্থা যাতে কার্যসমূহকে একটি কাজের এককে পরিণত করে সংগঠিত করা হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রণয়ন এবং সম্পর্ক নির্ধারণের লক্ষ্যে কার্য ডিজাইন প্রণয়ন করা আবশ্যক। কার্য ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে কর্মীর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ে সাহায্য করে। প্রতিষ্ঠানে সংগঠন সংক্রান্ত কৌশল নির্ধারণ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও কার্য ডিজাইন সহায়তা প্রদান কর। সুষ্ঠু কার্য ডিজাইন কর্মীদের কাজে প্রণোদিত করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে ও ব্যয় কমায় এবং কর্মীর কার্যসন্তুষ্টি অর্জন করে উচ্চ ঘূর্ণায়মানতার হার কমায়।
খ) কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন
প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে কর্মীদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনের অগ্রগতি পরিমাপ বা মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াকে কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন বলে। অন্যকথায়, কর্মীর দ্বারা সম্পাদিত কাজের মূল্য নিরূপণকে কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন বলে। কর্মীদের কার্যসম্পাদনের দক্ষতার মাত্রা বা স্তর বা মান সম্পর্কে অবহিত হয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং উন্নয়নের জন্য প্রলুব্ধ করাই কার্যসম্পাদন মূল্যায়নের মূখ্য উদ্দেশ্য।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি বা তত্ত্বাবধায়কের দ্বারা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের নিয়মমাফিক মূল্য নিরূপণকে কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন বা কর্মী মূল্যায়ন বা মেধা মূল্যায়ন বলে। প্রত্যাশিত মান অনুযায়ী কর্মী তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন করতে পারছে কি না তা জানার জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মীর কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। এর দ্বারা নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনে কর্মীরা ব্যক্তিগত গুণাবলি ও যোগ্যতা পরিমাপ করে ব্যক্তিত্বের পার্থক্য নির্ণয় ও শ্রেণীকরণ করা হয়।
নিরপেক্ষ কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন কর্মীর কাজে প্রেষণা যোগায়। র্যাঙ্কিং পদ্ধতি, গ্রাফিক বা রেখাচিত্র পদ্ধতি, জোড়া তুলনা পদ্ধতি, চেকলিস্প পদ্ধতি, কৃত্রিম বন্টন পদ্ধতি, জটিল ঘটনা পদ্ধতি, বাধ্যতামূলক বন্টন পদ্ধতি, বাধ্যতামূলক পছন্দ পদ্ধতি, মূল্যায়নের স্বাধীন পদ্ধতি, নম্বর পদ্ধতি, উদ্দেশ্য ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কৌশল প্রয়োগ করে কর্মীর কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন করা যায়।
গ) পুরস্কৃতকরণ
মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীকে পুরস্কার প্রদান বা শাস্তির ব্যবস্থাকরণ কর্মী প্রেষণায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে ইতিবাচক কর্মী প্রেষণার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পুরস্কৃতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পুরস্কার প্রদানকে ১) অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ২) আর্থিক ও অনার্থিক এবং ৩) কর্মফল ভিত্তিক ও সদস্যভিত্তিক ইত্যাদি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
কর্ম থেকে তৃপ্তি লাভ সম্পর্কিত বিষয়সমূহ অভ্যন্তরীণ পুরস্কারের আওতায় পড়ে। কার্য সমৃদ্ধকরণ কৌশল, কাজের স্বল্প সময়, সময়ের নমনীয়তা, পদ পরিবর্তন ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ পুরস্কার। বাহ্যিক পুরস্কারসমূহ হচ্ছে অর্থ, পদোন্নতি, ফ্রিঞ্জ বেনিফিট বা আনুতোষিক প্রদান ইত্যাদি।
মজুরি, বোনাস, মুনাফার অংশ ইত্যাদি প্রদান করে আর্থিক সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মীকে পুরস্কৃত করা হয়ে থাকে। অনার্থিক পুরস্কারের মধ্যে বড় কক্ষে চমৎকার আসন ব্যবস্থা, কার্পেট মোড়ানো মেঝে, নিজস্ব বাথরুম, সুদর্শন কর্ম শিরোনাম, নিজস্ব পরিচিতি কার্ড, সংরক্ষিত চিহ্নসহ গাড়িপার্কিং স্থান ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মীকে কার্যসম্পাদনে প্রণোদিত করা যায়।
কার্যসম্পাদন ভিত্তিক পুরস্কারের মধ্যে কমিশন, প্রণোদনামূলক মজুরি, গ্রুপ বোনাস এবং অন্যান্য বেতন পরিকল্পনা প্রধান। সদস্য ভিত্তিক পুরস্কার প্রদানের মধ্যে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, মুনাফায় অংশগ্রহণ, বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি বৃদ্ধি, জ্যেষ্ঠতা, বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে কর্মীর প্রেষণা সৃষ্টি করা যেতে পারে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে ক্ষমতার ভিত্তিতে কর্মীদের এসব পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে কর্মীরা প্রেষিত হয়ে উত্তম কার্যসম্পাদনে আত্মনিয়োগ করে।
ঘ) কার্য মূল্যায়ন
প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদ বা কার্যের গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন পদের আপেক্ষিক মূল্য নিরূপণের প্রক্রিয়াকে কার্য মূল্যায়ন বলে। অন্যকথায়, কার্য পরিবেশ, কাজের দায়িত্ব, ঝুঁকি, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা প্রভৃতি উপাদান বিবেচনাপূর্বক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ বা কার্যের তুলনামূলক মূল্য নিরূপণ করাকে কার্য মূল্যায়ন বলা হয়ে থাকে।
কার্য মূল্যায়নের মাধ্যমে এক পদের সাথে অন্য পদের তুলনামূলক মূল্য নিরূপণ করে কর্মীর বেতন ও মজুরি বা পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত র্যাঙ্কিং বা পদমর্যাদা বিন্যাস পদ্ধতি, গ্রেডিং বা কার্য শ্রেণীবিভাগ পদ্ধতি, উপাদান তুলনাকরণ পদ্ধতি এবং পয়েন্ট বা নস্বর পদ্ধতিতে কার্য মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। অতএব মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মীর ন্যায্য বেতন ও মজুরি স্কেল নির্ধারণের লক্ষ্যে যথাযথ কার্য মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঙ) ক্ষতিপূরণ এবং সুবিধাদি প্রদান
কর্মীরা কাজের বিনিময়ে পুরস্কার পায়। এরুপ পুরস্কার বেতন ও মজুরির আকারে প্রদান করা হয়ে থাকে। কর্মীর কাজের বিনিময়ে তার দৈহিক ও মানসিক শক্তির ক্ষতিপূরণ বা পুরস্কার প্রদানকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিপূরণ বলে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে কর্মীর কাজ বা প্রচেষ্টা বা অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ কর্মীকে ন্যায্য ও যথাযথ পুরস্কৃতকরণের ব্যবস্থাকে ক্ষতিপূরণ বলে। এরুপ ক্ষতিপূরণ বেতনভাতা, মজুরি, কমিশন, বোনাস, মুনাফার অংশ এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি যেমন- উৎসব ভাতা, ছুটি ভাতা, যাতায়াত ও বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা ইত্যাদি আকারে দেয়া হয়ে থাকে। উপযুক্ত ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ বা বেতন ও মজুরি কাঠামো কর্মীর কাজে প্রেষণা যোগায়, কর্মীকে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকার জন্য আকৃষ্ট করে।
চ) শৃঙ্খলা বিধান
প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্মীর আচরণকে প্রতিষ্ঠানের কার্যবিধি ও নিয়ম মোতাবেক এবং স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করে আনুগত্য বৃদ্ধি, নির্দেশ পালনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং কর্তব্যপরায়ণ করে তুলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে শৃঙ্খলা বিধান বলে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীর অনুপস্থিতি ও ঘূর্ণায়মানতার হার কমানো, দুর্ঘটনা হ্রাস, রোগশোক সম্পর্কে সচেতনতা, নিম্ন প্রেষণ ও মনোবলের উন্নতিকরণ, ভূল বোঝাবুঝি ও দ্বন্ধ নিরসন ইত্যাদি বিষয়গুলো মূলত শৃঙ্খলার আওতাধীন।
সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ সৃষ্টি এবং কর্মীদের বিধি মোতাবেক আচার-আচরণ প্রতিষ্ঠা করাই শৃঙ্খলা বিধানের অন্যতম মুখ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। শৃঙ্খলাবিধান এক ধরনের প্রশিক্ষণের শামিল। এর মাধ্যমে কর্মীকে অনুগত ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন করে তোলা যায়। শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যাসমূহের সংশোধন করাও শৃঙ্খলা বিধানের লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং শিল্প-শান্তি সংরক্ষণের জন্য শৃঙ্খলাবিধান শিল্পীয় গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে কাজ করে। শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার মধ্যে কার্যে অনুপস্থিত, কার্যক্ষেত্রের আচরণ, অসততা, বাহিরের কার্যকলাপ ইত্যাদি প্রধান। শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে কর্মীর বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা হলো- মৌখিক সতর্কতা, লিখিত সতর্কতা, বেতন কর্তন, পদাবিনতি, সাময়িক বরখান্ত এবং বরখাস্তকরণ।
৪) মানব সম্পদের সংরক্ষণ
প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীকে আগ্রহী ও প্রতিশ্রুতিশীল করে তোলার লক্ষ্যে কর্মীদের উপযোগী কার্য পরিবেশ প্রদান সম্পর্কিত বিষয়াদির সাথে সংরক্ষণ কার্যাবলি সম্পৃক্ত। প্রতিশ্রুতিশীল ও দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার কার্যকরী পরিবেশ সৃষ্টি করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্য। মানব সম্পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত কার্যাবলিগুলো নিম্নরুপ:
ক) নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য
কর্মীদের কর্মস্থলকে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি থেকে কর্মস্থলকে মুক্ত রেখে কর্মীর সার্বিক নিরাপত্তাবিধান মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্য। ১৯৬৫ সালের কারখানা আইনের বিধান মোতাবেক কর্মীর স্বাস্থ্যরক্ষা ও নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য। কাজের ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা রোধ সম্পর্কে কর্মীদের সচেতন করে তুলতে হবে। এজন্য নিরাপত্তাজনিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। কর্মীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহায়তা দানের জন্য যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। কর্মীর আর্থিক নিরাপত্তাবিধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মীর সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মান বজায় রাখার ব্যবস্থা করে একটি সুষ্ঠু কার্য পরিবশেরে নিশ্চয়তা বিধান করা বাঞ্ছনীয়।
খ) উত্তম শ্রম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা
কর্মী সন্তুষ্টি ও সাংগঠনিক ফলপ্রসূতা অর্জন মানব সম্পদ কার্যাবলির মূল দায়িত্ব। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-শ্রমিক, শ্রমব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক-মালিকের মধ্যে মধুর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে শিল্পীয় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হতে হবে। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমঝোতা সৃষ্টির জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে মধ্যস্থতা করতে হবের। শ্রমিকসংঘ ও যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধির সাথে চুক্তিসম্পাদনের লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে অভিযোগ দূরীকরণ ও বিরোধ মীমাংসায় কার্যকর ভূমিকা রেখে উত্তম শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও শিল্প শান্তি বজায় রাখা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কার্য।
গ) শ্রমকল্যাণ সম্পর্কিত কার্য
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মীর কাজের সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানে কর্মীকে ধরে রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার শ্রম কল্যাণমূলক ব্যবস্থা যেমন- খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাকরণ, গ্রন্থাগার ও ক্লাব প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করতে হবে। কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে হবে। এসব ব্যবস্থা কর্মীর প্রতিষ্ঠান ত্যাগের হার কমিয়ে আনবে এবং প্রতিষ্ঠানে উচ্চ উৎপাদনশীলতা বজায় থাকবে।