চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রকারভেদ
সাধারণত নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য নিয়ে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সংগঠিত হয়। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাঠামো, ধরন, ক্ষমতা, উদ্দেশ্য, আদর্শ সাংগঠনিক ও প্রকৃতিগত বিচারে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
G. A. Almond & G. B. Powell চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো-
১. প্রাতিষ্ঠানিক চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থগোষ্ঠী হলো আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠিত গোষ্ঠী। নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্ম-সম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। অ্যালমন্ড (Almond) এর ভাষায়, ‘Institutional groups are formal and have other political and social functions in addition to interest articulation.’ রাজনৈতিক দল, আইনসভা, সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, চার্চ ইত্যাদি প্রাতিষ্ঠানিক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এদের সদস্যপদ বৃত্তি বা পেশামূলক। এরূপ প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ প্রকাশ ছাড়াও সমাজের অন্য গোষ্ঠীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সুসংগঠিত, প্রভাবশালী, আনুষ্ঠানিক গোষ্ঠী হিসেবে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কি? চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা কি? |
২. সংগঠনভিত্তিক চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবিদাওয়া পেশ করার জন্য সংগঠিত গোষ্ঠীকে সংগঠনভিত্তিক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে। এ ধরনের গোষ্ঠী পরিকল্পিত ও সুসংহতভাবে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করে। এ গোষ্ঠীগুলো দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। শ্রমিক সংঘ, বণিক সংঘ, শিল্পপতিদের সংগঠন, ধর্মীয় সংগঠন ইত্যাদি সংগঠনভিত্তিক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদাহরণ।
৩. সংগঠনহীন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
বংশ, শ্রেণি, জাতি, ধর্ম, ভাষা, পেশা, সংস্কৃতি প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে অসংগঠিতভাবে গড়ে ওঠা গোষ্ঠীকে সংগঠনহীন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে। এ ধরনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে বা সচেতনভাবে সংগঠিত নয়। স্বার্থ রক্ষার জন্য এদের কোনো সংগঠিত পদ্ধতি থাকে না এবং তারা দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপরও কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
৪. স্বতঃস্ফূর্ত চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
কোনো বিশেষ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা গোষ্ঠীকে স্বতঃস্ফূর্ত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে। কোনোরূপ পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই এ ধরনের গোষ্ঠী তাদের অভাব, অভিযোগ, অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এবং দাঙ্গাহাঙ্গামা, ভাঙচুর, বিক্ষোভ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কিছু না কিছু স্বতঃস্ফূর্ত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী পরিলক্ষিত হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এ ধরনের গোষ্ঠী বেশি দেখা যায়।
গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ও গুরুত্ব |
অধ্যাপক Alan R. Ball দুই ধরনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন-
ক. স্বার্থগোষ্ঠী: স্বার্থগোষ্ঠী মূলত অভিন্ন পেশা বা বৃত্তির ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়। এ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সমস্বার্থগত অংশীদারি মনোভাব বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ কৃষকদের সংগঠন বা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংগঠনের কথা উল্লেখ করা যায়।
খ. মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী: অভিন্ন মূল্যবোধে বিশ্বাসী গোষ্ঠীকে মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী বলে। এ গোষ্ঠীর সদস্যরা কয়েকটি ক্ষেত্রে একই মূল্যবোধ ও মনোভাবের দ্বারা চালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ সমিতির কথা বলা যায়।
এছাড়া আরও কয়েক ধরনের চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। যেমন- রাজনৈতিক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, সংরক্ষণমূলক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, উন্নয়নমূলক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ইত্যাদি।
1 comment
[…] […]
Comments are closed.