ই গভর্নেন্স এর বৈশিষ্ট্য
ই-গভর্নেন্স এর পরিসর বিশাল ও ক্রমবর্ধমান। ই-গভর্নেন্সের কার্যক্রমের আলোকে এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
১. ই-সার্ভিস
ই-সার্ভিস হলো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি) সরকারি তথ্য ও সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। এ পদ্ধতিতে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য প্রভৃতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেবাগুলো ইলেকট্রনিক উপায়ে জনগণের কাছে দ্রুততার সাথে পৌঁছানো যায়।
২. প্রযুক্তিনির্ভরতা
ই-গভর্নেন্স তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণ, ব্যবসায়ী শ্রেণি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন অঙ্গ ও সংস্থার মধ্যে সরকারের সেবাসমূহের আদান-প্রদান, অন্যান্য লেনদেন, মিথস্ক্রিয়া প্রভৃতি পরিচালিত হয়ে থাকে। ই-গভর্নেন্স কার্যক্রম মূলত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট প্রভৃতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপকরণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
৩. সহজতর প্রক্রিয়া
সাধারণত সরকারি সেবাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া হয়ে থাকে জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ই-গভর্নেন্স প্রযুক্তির সহায়তায় সেবাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। এতে করে প্রান্তিক নাগরিকদের পক্ষেও উন্নত সেবা পাওয়া সহজ হয়।
৪. গতিশীলতা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি সেবাসমূহ প্রেরণ করা হয় বলে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। তাই ই-গভর্নেন্সকে গতিশীল গভর্নেন্স বলা হয়।
৫. ফিডব্যাকমুখী
ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে নাগরিকগণ সেবাপ্রাপ্তির পাশাপাশি সেবার মান বিষয়ে মতামত, অভিযোগ বা পরামর্শ সরকারকে জানাতে পারে। এ ধরনের ফিডব্যাক গতানুগতিক সরকারি ব্যবস্থায় দেখা যায় না।
৬. সক্ষমতা তৈরি
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে (ক্যাপাসিটি বিল্ডিং) সহায়তা করে। তথ্যপ্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানো যায়। এটি ই-গভর্নেন্সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নতুন প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক যাতে একুশ শতকের উপযোগী মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে ই-গভর্নেন্স।
৭. যোগসূত্র তৈরি
ই-গভর্নেন্সের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষে মানুষে যোগসূত্র তৈরি করা (কানেকটিং পিপল)। ই- গভর্নেন্স সরকার ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনে এবং বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর জটিলতা দূর করে থাকে। যেসব নাগরিক সাধারণত সরকারি সেবা নিতে আগ্রহ দেখায় না ই-গভর্নেন্স প্রবর্তিত হলে তারাও সরকারি সেবা পেতে উদ্যোগ নেয়।
৮. অর্থনৈতিক গতিশীলতা
ই-গভর্নেন্স সরকারি সেবাকে দ্রুত জনগণের দোরগোড়ায় পৌছানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকেও গতিশীল করে। ই-গভর্নেন্সের ফলে সর্বস্তরের লোকজন একইরূপ তথ্য জানার ফলে এবং তথ্য সহজলভ্য হওয়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ সহজতর হয়। যেমন- একজন কৃষক দূরবর্তী গ্রামে বসবাস করলেও তিনি জানতে পারেন তার উৎপাদিত পণ্যটির চলতি বাজার দর কত। এতে করে অর্থনীতির অগ্রগতি শুধু শহরমুখী না হয়ে সর্বমুখী হতে পারে।
৯. অনলাইন গভর্নেন্স
অনলাইন মাধ্যমে সরকারি সেবা দেশের সমগ্র জনগণের কাছে সহজলভ্য করাই ই-গভর্নেন্সের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ ব্যবস্থায় সরকার, নাগরিক, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযোগ স্থাপিত হয় এবং তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় আদান-প্রদান হয়।
১০. স্বচ্ছতার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা
ই-গভর্নেন্স সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। এতে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনগণ এর সুফল ভোগ করে।
১১. সরকারি কাজ সহজিকরণ
ই-গভর্নেন্সের সহযোগিতায় জনগণ স্বল্প খরচে কম সময়ে হাতের কাছে সেবা ও তথ্য পেয়ে থাকে। এর ফলে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া, করপ্রদান, বিভিন্ন বিল জমা দেওয়া, অর্থ আদান-প্রদান করা, ও বিভিন্ন পরীক্ষা ও ভর্তির ফরম জমা দেওয়া, চাকরির আবেদন ফরম জমা দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম খুব সহজে পরিচালনা করা সম্ভব।
১২. সার্বক্ষণিক উপস্থিতি
ই-গভর্নেন্স প্রক্রিয়ায় সরকারি তথ্য ও সেবা প্রদান কার্যত সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকে। নাগরিকগণ দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কিছু সেবা সার্বক্ষণিকভাবে পেতে পারে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে সরকারের নীতিমালা, নোটিশ, নতুন খবর, তথ্য ইত্যাদি দেওয়া থাকে। নাগরিকরা ঐসব ওয়েবসাইটে দিনরাতের যে কোনো সময় প্রবেশ করে সেবা গ্রহণ করতে পারে।
১৩. সাম্প্রতিকতা
ই-গভর্নেন্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সরকারি তথ্য ও সেবাসমূহ সাধারণত সর্বদা হালনাগাদ করা থাকে। ফলে নাগরিকরা সরকারের সাম্প্রতিক ও সর্বশেষ কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত থাকতে পারে।