Home » পুদগল শব্দের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। পুদগলের বিশেষত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর

পুদগল শব্দের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। পুদগলের বিশেষত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর

by TRI

পুদগল

ভূমিকা

অঙ্গুত্তর নিকায় সুক্ত পিটকের চতুর্থ গ্রন্থ। এতে সর্বমোট ২৩০৮টি সূত্র আছে। এগুলো এগারোটি নিপাত বা অধ্যায়ে বিভক্ত। আলোচ্য বিষয়ের সংখ্যানুসারে নিপাতসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি নিপাত কতিপয় বর্গে বিভক্ত। বিবিধ বর্গে ও সূত্রে বিভক্ত হলেও এদের বিষয় সমূহ প্রায় এক। পূর্ববর্তী নিকায় সমূহের ন্যায় এতে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সূত্রের অভাব নেই। সূত্রগুলো প্রায়ই গদ্যে ও পদ্যে রচিত। কোন কোন সূত্রে আবার ত্রিপিটকের অন্যান্য অংশের কিছু কিছু অবিকল উদ্ধৃতিও দৃষ্ট হয়। অভিধম্ম পিটকের পুগগল পঞ্ঞত্তি গ্রন্থটিকে অঙ্গুত্তর নিকায়ের দ্বিতীয় সংস্করণ বললে অত্যুক্তি হয় না।

পুদ্গল শব্দের তাৎপর্য

পুদ্গল অর্থ ব্যক্তি, পুরুষ, সত্ত্বা বা আত্মা বুঝায়। পরমার্থ সত্যানুসারে কিন্তু এ পুদ্গলের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না। এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল চিত্ত সন্ততি মাত্র। অঙ্গুত্তর নিকায়ের দুক নিপাতের অন্তর্গত পুদগল বর্গে ব্যক্তি বিশেষের স্বরূপ আলোচিত হয়েছে।

আরও পড়ুন:   

গনকমোগ্গলায়ন কে ছিলেন? সংক্ষেপে গনকমোগ্গলায়ন সূত্রের মূল বিষয়বস্তু আলোচনা কর

পুদ্গল বর্গের বিষয় বস্তু

পুদ্গল বর্গে তথাগত ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধ বিভিন্ন প্রকার পুদ্গলের স্বরুপ তার শিষ্যদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন। সেই অনুসারে বিভিন্ন প্রকার পুদগল বা ব্যক্তির বর্ণনা উল্লেখ করা হল।

১. জগতে দুইজন ব্যক্তি রয়েছেন যারা বহুজনের সুখ, বহুলোকের লাভ, দেব মনুষ্যগণের হিত ও সুখের জন্য। সেই ব্যক্তিগণ হলেন তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ ও রাজা চক্রবর্তী। বুদ্ধের মতে এই দুই পুদগল জাত হন বহু ব্যক্তির হিত, বহুজনের সুখ, বহুলোকের লাভ, দেব মনুষ্যগণের মঙ্গল ও সুখের জন্য।

২. আবার জগতে দুই ব্যক্তি জাত রয়েছেন অসাধারণ মানুষ হিসেবে। তারা হলেন তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধ ও রাজা চক্রবর্তী।

৩. তথাগত অর্থৎ সম্যক সম্বুদ্ধ ও রাজা চক্রবর্তী বহুজনের অনুতাপের কারণ হয়। উক্ত দুইজন পুদগলের মহাপ্রয়াণ ও বহু ব্যক্তির অনুতাপের কারন হয়।

৪. এই দুই জন ব্যক্তিই স্তুপ লাভের যোগ্য বলে তথাগত ভগবান বুদ্ধ এ পুদগল বর্গে উল্লেখ করেন।

৫. বুদ্ধের মতে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধ ও পচ্চেক বুদ্ধ আছে। সম্যক সম্বুদ্ধ নিজেও বিমুক্ত হন এবং অপরকেও মুক্ত করতে পারেন। পচ্চেক বুদ্ধ শুধুমাত্র নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম।

৬. জগতে বজ্রের শব্দে দুই জন ব্যক্তি কম্পিত হন না। তিনি হলে ক্ষীণাস্রব ভিক্ষু যিনি আস্রব ধ্বংস করেছেন।

৭. অশনী শব্দে অকম্পিত দুই ব্যক্তি হলেন ক্ষীণাস্রব ভিক্ষু ও ভদ্রজাত অশ্ব।

৮. আবারও দুইজন ব্যক্তি রয়েছে যারা অশনিশব্দে অকম্পিত থাকেন। তারা হলেন ক্ষীণাস্রব ভিক্ষু ও পশুরাজ সিংহ।

৯. এরপর ভগবান বুদ্ধ দুই কারণ উল্লেখ করেন যা দ্বারা অমুনষ্যগণ মানুষের ন্যায় ভাষন করে না। প্রথম কারণ হল এই ভেবে আমরা মিথ্যা বলব না এবং অপরটি হল অন্যায়ভাবে অপরকে অপবাদ দিব না।

১০. স্ত্রী জাতি মৈথুন সেবন ও শিশু জন্ম দান এই দুই বিষয়ে অতৃপ্ত ও অপূর্ণ জীবনাবসান করে।
এ বর্গে অবৈধ সামাজিক সংশ্রব ও বৈধ সামাজিক সংশ্রব বিষয়েও আলোকপাত করা হয়।

এখানে অবৈধ সামাজিক সংশ্রব এর স্বরুপ ব্যাখ্যা করা হয় এরূপে- এতে একজন স্থবিব ভিক্ষু ভাবে স্থবির ভিক্ষু বা মধ্যম স্তরের ভিক্ষু বা নবদীক্ষিত আমার সাথে কথা না বলুক আমিও তার সাথে কথা বলব না এমনকি একজন স্থবির ভিক্ষুও যদি আমার সাথে কথা বলেন, তিনি আমার ক্ষতির অভিপ্রায়ে বলবেন, লাভের অভিপ্রায় নিয়ে নয়। আমি তাকে বলব না। আমি তাকে বিরক্ত করতাম না। অবৈধ সামাজিক সংশ্রব এরুপ এবং অবৈধ লোক অন্যদের সাথে এভাবে মিশে।

বৈধ সামাজিক সংশ্রব এরূপ- এতে একজন স্থবির ভিক্ষু ভাবে কোন স্থবির ভিক্ষু বা মধ্যম বয়স্ক ভিক্ষু বা নবদীক্ষিত আমার সাথে কথা বললে আমিও তার সাথে কথা বলতাম। একজন স্থবির ভিক্ষুও যদি আমার সাথে কথা বলতেন, তিনি আমার লাভের জন্য তা করতেন, ক্ষতির জন্য নয়। আমি তাকে বিরক্ত করতাম না। এবং তিনি যথাযথ আছেন দেখে আমি সেই রুপ কাজ করতাম। এভাবে বৈধ ব্যক্তি অন্যদের সাথে সংশ্রব করে এরূপই বৈধ লোকের সামাজিক সংশ্রব।

তথাগত ভগবান বুদ্ধ এ বর্গে আবার বলেন বাদ-বিবাদ উভয়পক্ষের একঘুয়ে দৃষ্টি, অন্তরের ঈর্ষা, বিষন্নতা এবং অসন্তুষ্টি দ্বারা ব্যক্তিত্ব ব্যাহত হয়। এতে বিবাদ দীর্ঘায়িত, তিক্ত ও মোকদ্দমায় পর্যবসিত হয়। ফলে ভিক্ষুগণ শান্তিতে বাস করতে পারবে না। কিন্তু ভিক্ষুগণ বাদ বিবাদ পক্ষের একঘুয়ে দৃষ্টি, অন্তরের ইচ্ছা, বিষন্নতা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীন প্রশান্তি হেতু বিবাদ দীর্ঘায়িত, তিক্ত ও কলহে পর্যবসিত হয় না এবং ফলে ভিক্ষুগণ শান্তিতে বাস করতে সমর্থ হয়।

এভাবেই ভগবান বুদ্ধের বিভিন্ন পুদগল ও তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করে এ পুদগল বর্গের পরিসমাপ্তি ঘটে।

 

Related Posts