দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র
‘দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র’ ধারণাটির মূল প্রবক্তা হলেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রাগনার নার্কস্। অনুন্নত দেশের অর্থনৈতিক অনুন্নয়নের কারণ বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে তিনি এ ধারণাটির অবতারণা করেন। তার মতে, “দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হলো এমন কতকগুলো শক্তির একত্রিভবন যারা একে অপরের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি দেশকে দরিদ্র করে রাখে।” (“It implies a circular constellation of forces tending to act and react upon one another in such a way as to keep a poor country in a state of poverty.” – Ragnar Nurkse)।
অধ্যাপক রাগনার নার্কস একটি সুন্দর বাক্যের মাধ্যমে “দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র’ ধারণাটি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “একটি দেশ দরিদ্র, কারণ সে দরিদ্র” (A country is poor. it is poor”)। অধ্যাপক নার্কস্ আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, “কোন দেশ দরিদ্র, কারণ দেশে মূলধন কম এবং মূলধন কম কারণ সে দেশ দরিদ্র” (“A country is poor because it has little capital and it cannot raise capital because it is poor.”) মূলধনের চাহিদা ও যোগান উভয় দিক থেকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র’ ধারণাটি ব্যাখ্যা করা যায়।
আরও পড়ুন: দারিদ্র্য কাকে বলে? দারিদ্র্যের প্রকারভেদ আলোচনা কর
মূলধনের চাহিদা
মূলধনের চাহিদার দিক হতে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, অনুন্নত দেশসমূহে উৎপাদন কম বলে লোকের মাথাপিছু আয় কম। আয় কম বলে লোকের ক্রয় ক্ষমতাও কম। জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা কম বলে বাজারে পণ্যের চাহিদা কম। পণ্যের চাহিদা কম বলে লোকের বিনিয়োগ করার প্রবণতাও কম বলে মূলধনের চাহিদাও কম। এ কারণে অনুন্নত দেশের উৎপাদনশীলতা ও মাথাপিছু আয় কম হয়। ফলে দেশে দারিদ্র বিরাজ করে। এভাবে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র আবর্তিত হয়। নিচের চিত্রে মূলধনের চাহিদার দিক হতে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রটি দেখানো হলো :
মূলধনের যোগান
মূলধনের যোগানের দিক হতেও দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রটি ব্যাখ্যা করা যায়। অনুন্নত দেশের লোকের আয় কম বলে সঞ্চয়ের পরিমাণ কম হয়। সঞ্চয় কম হওয়ার দরুন বিনিয়োগও কম হয়। বিনিয়োগের স্বল্পতার দরুন মূলধনের অভাব দেখা দেয় । মূলধনের অভাবে অনুন্নত দেশের উৎপাদনও কম হয়। ফলে অনুন্নত দেশের মাথাপিছু আয় কম থাকে। এভাবে অনুন্নত দেশসমূহ ‘দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে’ আবন্ধ থাকে।
নিচের চিত্রে মূলধনের যোগানের দিক হতে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রটি দেখানো হলো :
উপরের চিত্র হতে দেখা যায় যে, স্বল্প উৎপাদন, স্বল্প আয়, স্বল্প সঞ্চয়, স্বল্প বিনিয়োগ, স্বল্প মূলধন চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে। এভাবে দারিদ্র্যের চক্রটি আপন পথে ঘুরে দরিদ্র দেশকে দরিদ্র করে রাখে। অধ্যাপক নার্কস্-এ চক্রটিকেই “দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র” (Vicious circle of poverty) বলে আখ্যায়িত করেছেন।