Home » মুদ্রাস্ফীতি কি ? বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলো কি কি ?
মুদ্রাস্ফতি কি বা কাকে বলে

মুদ্রাস্ফীতি কি ? বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলো কি কি ?

by TRI

মুদ্রাস্ফীতি কি ?

যখন দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার দামস্তর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং অর্থের মূল্য ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি মানে অর্থের প্রসার। কাজেই মুদ্রাস্ফীতির সময় অর্থের যোগান বৃদ্ধি পায়, ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ বাড়ে, শ্রমিক শ্রেণি উচ্চ মুজরি প্রত্যাশা করে বলে দ্রব্যসামগ্রীর দাম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। সাধারণত দামস্তরের এরূপ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধিই হলো মুদ্রাস্ফীতি।

মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যথা :

  • অধ্যাপক কুলবর্ন এর মতে, “মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে অধিক পরিমাণ অর্থ কম পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রীর পিছনে ধাবিত হয়।”
  • জে. এম. কেইনস্-এর মতে, “মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে এমন একটি অবস্থা, যেখানে দ্রব্যসামগ্রীর যোগানের তুলনায় কার্যকর চাহিদা বেশি হয়।”
  • অধ্যাপক পিগু-এর মতে, “অর্থনীতিতে উৎপাদনশীল কাজ-কর্মের চেয়ে যদি মানুষের আয় দ্রুত বাড়ে তখনই মুদ্রাক্ষীতি দেখা দেয়।”
  • অধ্যাপক গ্রেগরির মতে, “ক্রয়ক্ষমতার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি।” • ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মতে, “ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধিই হলো মুদ্রাস্ফীতি।”
  • মনিটারিস্টদের মতে, “অর্থের অতিরিক্ত যোগান বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।”

অতএব, যখন দীর্ঘকালব্যাপী দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার দামস্তর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং অর্থের মূল্য ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।

আরও পড়ুন:   জাতীয় আয় কাকে বলে? বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের বিভিন্ন খাত

বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণ

বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো :

১। অর্থের যোগান বৃদ্ধি

অর্থের যোগান বৃদ্ধিই বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ। ১৯৭১-৭২ সালে অর্থের সংকীর্ণ যোগান যেখানে মাত্র ৪৮৫.৭ কোটি টাকা ছিল সেখানে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সংকীর্ণ মুদ্রার যোগান পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭,১৬৩ কোটি টাকা । সুতরাং অর্থের যোগান বৃদ্ধি বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে দায়ী।

২। উদার ঋণ নীতি

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন প্রকারের ঋণ প্রদানে উদারিকরণের নীতিগ্রহণ করায় উৎপাদন বৃদ্ধির পরিবর্তে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায় বেশি। ফলে ২০০৯ সালের মার্চ মাস নাগাদ ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২,৪৮,৭৬৮ কোটি টাকা। সুতরাং লাগামহীন ঋণ বৃদ্ধির কারণে দেশে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।

৩। ঘাটতি ব্যয় বৃদ্ধি

বাংলাদেশ সরকার প্রায় বছরই ঘাটতি ব্যয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন ব্যয় মিটিয়ে থাকে। ফলে দেশে অর্থের যোগান পরোক্ষভাবে বৃদ্ধি পায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় ।

৪। খাদ্য ঘাটতি

বাংলাদেশে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই খাদ্য ঘাটতি মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম একটি কারণ।

৫। প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি

সাম্প্রতিককালে উপজেলা প্রশাসনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। এতে উৎপাদন না বাড়লেও দ্রব্যমূল্য অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৬। তেলের মূল্য বৃদ্ধি

২০১১ তে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে প্রতি ব্যারেলে ৯৫-১১০ ডলার। তাই তেলের মূল্য বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করেছে।

৭। যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা

বাংলাদেশে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা তত উন্নত না হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্য পৌঁছাতে খরচ অনেক বেশি হয়। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

৮। পরোক্ষ কর

বাংলাদেশে অনেক বিলাসজাত এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উপর উচ্চহারে পরোক্ষ কর ধার্য করা হয়। ফলে অন্যান্য দ্রব্যের মূল্যও সমহারে বৃদ্ধি পায়।

৯। আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোতে ব্যয়

সরকার বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে । এরূপ ব্যয় সরাসরি উৎপাদনশীল নয়। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

১০। আমদানি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি

বাংলাদেশ শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি করে এবং এসব দ্রব্যের বিশ্ব বাজারে মূল্য বৃদ্ধির ফলে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়।

১১। রপ্তানি বৃদ্ধি

রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে দেশীয় চাহিদার সাথে যোগানের পার্থক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে।

১২। উৎপাদন হ্রাস

দেশের মোট উৎপাদন বিশেষ করে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

১৩। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি

শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, কাগজ, নিউজপ্রিন্ট, পেট্রোল ও পেট্রোলজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হচ্ছে।

১৪। মজুদদারি ও কালোবাজারি

মজুদদার ও কালোবাজারি, মুনাফাখোর, চোরাকারবারি প্রভৃতি অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে । ফলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায় ।

১৫। বেতন বৃদ্ধি

কয়েক দফা সরকারি, বেসরকারি কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি পেলেও সে অনুপাতে দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় নি। তাই দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

Related Posts