জলপাই তেলকে মূলত অলিভ অয়েল বলা হয়। কারণ জলপাই এর ইংরেজি অলিভ (Olive) এবং তেল এর ইংরেজি অয়েল (Oil)। আজকের আর্টিকেলে আমরা অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা, অলিভ অয়েল তেলের দাম ও রূপচর্চায় অলিভ অয়েলের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করবো।
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি ?
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা অনেক। বর্তমানে উল্লেখযোগ্যভাবে চুল ও ত্বকের যত্নে এবং রূপচর্চায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া অলিভ অয়েলের রয়েছে নানা উপকারিতা।
প্রাকৃতিক অলিভ অয়েলে ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এছাড়া এতে এলিক অ্যাসিড নামক মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে । গবেষণায় দেখা গেছে, এলিক অ্যাসিড প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। সাথে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও আটকাতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তিলাভে সহায়তা করে। এছাড়া এতে রয়েছে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই এবং কে। এই তেল রক্তের কোলেস্টেরলকে জারণ থেকে রক্ষা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
অলিভ অয়েল তেলের দাম কত ?
অত্যন্ত উপকারি অলিভ অয়েল তেলের বর্তমান তেলের দাম বিভিন্ন কোম্পানি ও উৎপাদনভেদে ভিন্ন ভিন্ন। তবে প্রতি ১০০ মিলি ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে এর গুণের সাথে দামের হিসাব না কষাই ভালো।
অলিভ অয়েলের বহুমুখী ব্যবহার
অলিভ অয়েল ত্বক, চুল ও রূপচর্চাসহ নানাক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। নিচে এর বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
শীতে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল
শীত আমেজের বা আনন্দের হোক না কেন, তা সঙ্গে করে নিয়ে আসে ত্বক ও চুলের বেশ কিছু সমস্যা। শীতকালে ত্বক নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। এই সময় শরীরে দরকার বাড়তি যত্নের। এই জন্য শীতে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে হয়। তাই এই সময় শরীরের ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহারের বিকল্প নেই বললেই চলে। শীতে অলিভ অয়েলের চেয়ে উপকারি প্রসাধনীর খোঁজ পাওয়া দুষ্কর। কারণ জলপাইয়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বকের ভেতরের স্তরে প্রয়োজনীয় খনিজের যোগান দেয়। এতে ত্বক থাকে উজ্জ্বল। এমনকি ত্বককে টোনড রাখতেও সাহায্য করে এই অলিভ অয়েল।
ত্বক নরম, কোমল ও উজ্জ্বল রাখতে অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই ও ভিটামিন-এ। যা শুষ্ক, স্বাভাবিক, তৈলাক্ত- যে কোন প্রকার ত্বকের জন্য খুব ভাল। শুধু তাই নয় অলিভ অয়েলে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড। ফলে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে অলিভ অয়েল। বলিরেখা ও নির্জীব ত্বকের সমস্যা দূরীকরণেও অলিভ অয়েল দারুণ কার্যকর। গোসলের পর ত্বক ভিজে থাকা অবস্থাতেই সারা শরীরে অলিভ অয়েল লাগালে ত্বকের ভেতরে গিয়ে পুষ্টি জোগাবে, ফলে ত্বক হয়ে উঠবে কোমল ও মসৃণ। শুধু তাই নয়, নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে।
ঠোঁট নরম রাখতে অলিভ অয়েল
আজকাল ঠোঁটের যত্নেও অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠোঁটে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে – এক চামচ অলিভ অয়েল, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও আধা চামচ বড় দানার চিনি একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। চিনি গলে না যাওয়া পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন। এটি ঠোঁটের মরা কোষ দূর করে। এভাবে দিনে একবার ব্যবহারে ঠোঁটকে কোমল রাখে ও শীতে ঠোঁট ফাটা থেকেও রক্ষা করে।
অলিভ অয়েল চুলের উপকারিতা
শীতে ত্বকের মত চুলও রুক্ষ হয়ে যায়। তাই বাজারের কন্ডিশনারের বদলে অলিভ অয়েল দিয়েই চুলের যত্ন নেন অনেকে। চুলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে স্কাল্পে ও চুলে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর হালকা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। ১০-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন। এতে ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে অলিভ অয়েল। এভাবে একদিকে চুল যেমন মজবুত হবে তেমনি চুলের উজ্জ্বলতাও বাড়বে। এমনকি চুলের আগা ফেটে যাওয়ার সমস্যাও রোধ করবে অলিভ অয়েল।
চোখের যত্নে অলিভ অয়েল
প্রতিদিন হাতের আঙুলে অল্প পরিমাণ অলিভ অয়েল নিয়ে চোখের চারপাশে হালকা করে ১ মিনিট ম্যাসাজ করে, ১৫ মিনিট পর ভেজা তুলা দিয়ে হালকা করে মুছে নিন। এতে চোখের ডার্ক সার্কেলের সমস্যা কমে যাবে।
মেকআপ রিমুভার হিসেবে অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল মেকআপ রিমুভার হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। এটি ত্বককে নরম রাখে এবং ত্বক থেকে মেকআপের উপাদান তুলে ফেলতে সাহায্য করে। এক টুকরো পরিষ্কার তুলো নিয়ে সেটি অলিভ অয়েলে ডুবিয়ে নিন। এরপর ধীরে ধীরে মুখে ঘষে মেকআপ তুলে ফেলুন। এরপর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
অতএব, আমরা অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে জেনে গেলাম।
এরকম আরও উপকারি ও দরকারি আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন সহজপড়া.কম।