Home » মাথা ব্যথার কারণ কী? কি কি কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে?
মাথা ব্যথার কারণ

মাথা ব্যথার কারণ কী? কি কি কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে?

by TRI

মাথা ব্যথার কারণ

মাথা ব্যথার খুব পরিচিত দুটি কারণ হলো মাইগ্রেন আর টেনশন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই টেনশন টাইপের মাথাব্যথা। আর বাকি ১১ শতাংশের জন্য দায়ী হলো মাইগ্রেন। ধূমপান, মদ্যপান, মাদক সেবন, অনিয়মিত ঘুম ও অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, অতিরিক্ত গরম পরিবেশ, মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ ইত্যাদি মাথা ব্যথার কারণ । 

মাথা ব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে।

যেমন- মাথার পিছনে ব্যথা, মাথার মাঝখানে ব্যথা, মাথার পিছনে ডানদিকে ব্যথা, মাথার পিছনে বাম দিকে ব্যথা, মাথার পিছনে ঘাড়ে ব্যথা, মাথা ভারী লাগা ইত্যাদি। 

যেসব কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে

মাথা ব্যথা প্রধানত দুই প্রকার। একটি হলো প্রাইমারি হেডেক। যেমন- মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তার কারণে মাথা ব্যথা, ক্লাস্টার হেডেক ইত্যাদি। আর অন্যটি হলো সেকেন্ডারি হেডেক। যেমন- সাইনোসাইটিস,, স্ট্রোক, মাথার আঘাতজনিত কারণে ব্যথা, মস্তিষ্কে টিউমার ইত্যাদি। ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে যেসব বিষয় চিহ্নিত নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-

মাইগ্রেন

প্রচন্ড মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে মাইগ্রেনের ব্যথা অন্যতম। মেয়েরা এতে বেশি ভুগে থাকে। সাধারণত মাথার একপাশে মাইগ্রেনের ব্যথা অনুভূত হয়। এটি সারাক্ষণ চিনচিন করে এমন নয় বরং থেমে থেমে হয় এবং ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত আলো ও শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এ ব্যথা হতে পারে। তাই রোগী অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে। মাইগ্রেনের ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেক সময় শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়া ও মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালন সমস্যা থেকেও এটি হতে পারে। আবার পরিবারে কারোর মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে জেনেটিক কারণেও এটি হতে পারে।

দুশ্চিন্তাজনিত মাথা ব্যথা

সবচেয়ে কমন যে মাথা ব্যথার নাম তা হলো দুশ্চিন্তাজনিত মাথা ব্যথা। আমাদের প্রত্যেকেরই এই ধরণের মাথা ব্যথার সাথে পরিচয় আছে। অতিরিক্ত কাজের চাপ, বিশ্রামের অভাব, কোনো বিষয় নিয়ে দীর্ঘসময় চিন্তিত থাকা, এমনকি ঘুমের সময় মাথার অবস্থান বদলের জন্যও এ ধরনের ব্যথা হতে পারে। এই ধরণের মাথা ব্যথা সারা মাথাজুড়ে হয় এবং খুব একটা তীব্র না হলেও সারাক্ষণ থাকে। চলাফেরায় এ ব্যথা তেমন একটা বাড়ে না। সকালের দিকে এই ব্যথা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে।

সাইনাস

সাইনাস জনিত কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। নাকের দু’পাশের হাড় ও কপালের হাড়ের ভেতর ছোট ছোট কিছু ফাঁকা জায়গাগুলোকে সাইনাস বলে। আমাদের মস্তিষ্কের ভারের সমতা বজায় রাখার জন্য এই ফাঁকা জায়গাগুলোতে বাতাস ঢুকে থাকে। আর এসব সাইনাসের আবরণে প্রদাহ হলে বাতাস ও সর্দি জমে সাইনাসগুলোর জায়গায় তীব্র ব্যথা হয়। এটাই সাইনোসাইটিস বা সাইনাস হেডেক নামে পরিচিত। এই ব্যথার সাথে নাক বন্ধ, সর্দি, হাঁচি-কাশি এবং হালকা জ্বরবোধ হতে পারে।

ক্লাস্টার হেডেক

কখনো কখনো চোখের চারপাশে হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হয়ে বেশ তীব্র হয়। মাথার যেকোনো একপাশ  থেকে ব্যথা শুরু হয়ে চোখের পেছনের দিকে যায়। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর হয় এবং দিনে কয়েকবার হয়। এর স্থায়িত্ব ৫-১০ মিনিট থেকে শুরু করে ঘণ্টা তিনেক পর্যন্তও হতে পারে। এটাকে ক্লাস্টার হেডেক বলে। এই ধরণের মাথা ব্যথায় চোখ লাল হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের চারপাশ ফুলে যায়, নাক বন্ধ থাকে, এমনকি চোখের দৃষ্টিতেও সামান্য ব্যঘাত হতে পারে। তীব্র আলো, তীব্র গন্ধ এবং তীব্র শব্দে এই ধরনের মাথা ব্যথা বেড়ে যায়। দিনে বা রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর হয়, এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে।

সেকেন্ডারি হেডেক

ব্রেইনের নানা ধরণের সমস্যা যেমন- টিউমার, সিজার, এবং ব্রেইনের রক্তনালিতে ইনফেকশনের কারণে এই ধরনের মাথা ব্যথা হতে পারে। এই ধরণের মাথা ব্যথায় দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ যত দেরি হবে তত ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সেক্সুয়াল হেডেক

স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময় বা আগে-পরে মাথা ব্যথা হতে পারে। একে সেক্সুয়াল হেডেক বলে। সাধারণত ব্রেইনে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এ ধরনের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এ ব্যথা খুব একটা তীব্র হয় না এবং কিছুক্ষণের মধ্যে সেরেও যায়। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। তাই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে হবে। 

হরমোনাল হেডেক

মেয়েদের শরীরের হরমোনের তারতম্য অন্যতম একটি মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। একে হরমোনাল হেডেক বলে। মাসিকের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় বলে এই ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের জন্য এই ধরনের মাথা ব্যথা হয়। এর জন্য আলাদা করে কোনো চিন্তার প্রয়োজন নেই। তবে ব্যথা খুব বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পেইন কিলার জাতীয় ঔষুধ খেতে হবে।

সাইকোজেনিক পেইন

কখনো কখনো কোনো কারণ ছাড়াই মাথাব্যথা হতে পারে। এমনকি মন খারাপ থাকলেও মাথা ব্যথা হতে পারে। এটি সাইকোজেনিক পেইন নামে পরিচিত। এই ধরনের ব্যথার সাইকোলজিক্যাল কারণ থাকে। এই ধরনের মাথা ব্যথা দেখা দিলে সাইকিয়াট্রিক কাউনসেলিং করতে হবে।

এছাড়া অতিরিক্ত চা বা কফি পানেও মাথা ব্যথা হতে পারে। যদি এমনটা হয় তবে বেশি পরিমাণে চা বা কফি পান থেকে বিরত থাকতে হবে। 

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও লেখা পড়তে ভিজিট করুন সহজপড়া.কম

তথ্যসূত্র

Related Posts