মুদ্রার কার্যাবলী
অধ্যাপক কিনলি (Kinley) বিস্তৃত অর্থে মুদ্রার কার্যাবলী তিনভাবে ব্যাখ্যা করেন – ক) প্রাথমিক কাজ, খ) মাধ্যমিক কাজ, গ) সহায়ক কাজ। এখানে প্রাথমিক কাজ বলতে বিনিময়ের মাধ্যম এবং মূল্যের পরিমাপক হিসেবে বিবেচনা করেন। মূল্যের ভাণ্ডার এবং স্থগিত লেনদেনের মান মাধ্যমিক কাজ আর তারল্য আয়, বন্টন, ঋণের ভিত্তিতে সহায়ক কাজের অন্তর্ভুক্ত করেন।
আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ মুদ্রার কার্যাবলী প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- ক) বাণিজ্যিক কার্যাবলী, খ) সামাজিক কার্যাবলী, গ) মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলী।
ক) বাণিজ্যিক কার্যাবলী
১) বিনিময়ের মাধ্যম
মুদ্রার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা। কোনো দ্রব্য ক্রয় কিংবা বিক্রয়ের জন্য মধ্যস্থতার প্রয়োজন হয়। আর এই মধ্যস্থতার জন্য মুদ্রা প্রধান ভূমিকা পালন করে। মুদ্রার মধ্যস্থতায় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় সহজতর এবং দ্রুত সম্পাদিত হয়।
২) মূল্যের পরিমাপক
বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য ও সেবার মূল্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। মুদ্রার মাধ্যমে দ্রব্য ও সেবার মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে পরিমাপ করা যায়। মুদ্রার মাধ্যমে যেকোনো পরিমাণে যেকোনো দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব হয়।
৩) ঋণের ভিত্তি
আমানত হিসেবে ব্যাংকে রক্ষিত মুদ্রার ভিত্তিতেই ব্যাংক ঋণপত্র প্রচলন করে। এছাড়া মুদ্রা চেক, ব্যাংক ড্রাফট, বিনিময় বিল প্রভৃতি ঋণপত্রের ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে।
আরও পড়ুন: মুদ্রা কি? মুদ্রা কত প্রকার ও কি কি?
৪) সঞ্চয়ের বাহন
পচনশীল ও ক্ষণস্থায়ী বলে অধিকাংশ দ্রব্যসামগ্রী সঞ্চয় সম্ভব নয়। আবার এর জন্য অনেক স্থানেরও প্রয়োজন। তাই এর বিক্রয়লব্ধ আয় দ্বারা নিরাপদ সঞ্চয় তহবিল গড়ে তোলা সম্ভব।
৫) স্থগিত লেনদেনের মান
বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য ঋণের ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়। স্থগিত লেনদেন বলতে ভবিষ্যৎ দেনা-পাওনাকে বোঝায়। দ্রব্যের দাম দ্রুত পরিবর্তনশীল, মুদ্রার মূল্য দ্রুত পরিবর্তনশীল নয়। ফলে বর্তমানে এর মাধ্যমে লেনদেনের মূল্য ভবিষ্যতে পরিশোধের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
৬) তারল্যের মান
মুদ্রা সম্পদের নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে কাজ করে। তাই মুদ্রার মাধ্যমে দ্রব্যসামগ্রী যেকোনো স্থান বা সময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। মুদ্রাকে যেমন সহজেই দ্রব্যসামগ্রীতে রূপান্তর করা যায় তেমনি দ্রব্যসামগ্রীকেও সহজেই মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়। তাই মুদ্রা তারল্যের মান হিসেবে কাজ করে।
৭) বণ্টনের কাজ
উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনের পারিশ্রমিক হিসেবে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা মুদ্রার মাধ্যমে বণ্টিত হয়। তাই মুদ্রা বণ্টনেরও কাজ করে।
৮) মূল্য স্থানান্তরের বাহন
মুদ্রা মূল্য স্থানান্তরের বাহন হিসেবে কাজ করে। বাস্তবে অনেক সম্পদ আছে, যা সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় না। এক্ষেত্রে সম্পদ বিক্রয়ের মাধ্যমে মুদ্রার সাহায্যে এর মূল্য সহজে স্থানান্তর করা যায়।
খ) সামাজিক কার্যাবলী
১। একজন ব্যক্তির মর্যাদা ও নিরাপত্তা তার সম্পদের আর্থিক মূল্যমান দ্বারাই নির্ণীত হয়। তাই মুদ্রা ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা ও নিশ্চয়তার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
২। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের সমাজের প্রতি কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার প্রদান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গকে দান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ইত্যাদি কাজ মুদ্রার মাধ্যমে করেতে হয়। এক্ষেত্রে মুদ্রা সামাজিক সম্পর্ক রক্ষায় কাজ করে।
গ) মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলী
তাৎক্ষণিক বিপদ থেকে মুদ্রা মানুষকে মুক্ত করতে পারে। যেকোনো কাজ করতে গেলে মুদ্রার প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মুদ্রার প্রয়োজন। এর আধিক্য মানুষের মনে সুখানুভূতির সৃষ্টি করে। যার ফলে সে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারে। এটি মানুষের জীবনকে আনন্দময় করে তোলে।