জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি
জাতীয় আয় হিসাবের প্রক্রিয়াকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি বলে। একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার মাপকাঠি হলো জাতীয় আয়। তাই এর সঠিক পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় আয় পরিমাপে সাধারণত তিনটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো হলো-
১। উৎপাদন পদ্ধতি (Output Method)
২। আয় পদ্ধতি (Income Method)
৩। ব্যয় পদ্ধতি (Expenditure Method)
নিচে এগুলোর বর্ণনা করা হলো-
১। উৎপাদন পদ্ধতি
উৎপাদন পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশে যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপাদিত হয়, তার আর্থিক মূল্য হিসাব করে মোট জাতীয় আয় পরিমাপ করা হয়।
উৎপাদন পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপ করার সময় কতকগুলো বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। যথা-
ক) শুধুমাত্র চূড়ান্ত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম হিসাবভুক্ত হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম হিসাবভুক্ত হয় না।
খ) আর্থিক মূল্যে বিনিময় হয় না এরূপ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম জাতীয় আয় পরিমাপে বাদ যায়। যেমন- পিতামাতার সেবা।
গ) পুরাতন মূলধন, সম্পত্তি আয় পরিমাপে ধরা হয় না।
ঘ) পরোক্ষ কর জাতীয় আয় পরিমাপে দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের দাম থেকে বাদ দিতে হয়।
ঙ) বিদেশ থেকে অর্জিত অর্থ যাগ ও বিদেশের প্রাপ্য অর্থ বিয়োগ করে জাতীয় আয় পরিমাপ করতে হয়।
চ) জাতীয় আয় পরিমাপ করার সময় তথ্যের নির্ভুলতার দিকে সতর্কদৃষ্টি রাখতে হয়।
আরও পড়ুন: জাতীয় আয় পরিমাপে সমস্যাগুলো কি কি?
২। আয় পদ্ধতি
আয় পদ্ধতি অনুযায়ী উৎপাদনের সকল উপকরণ যেমন- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনের আয় যথাক্রমে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা। এই আয়সমূহের যোগফলের সমষ্টি হলো আয় পদ্ধতি অনুযায়ী জাতীয় আয়। উল্লেখ্য ব্যক্তিগত আয়ের মধ্যে হস্তান্তর পাওনা অন্তর্ভুক্ত থাকলে তা বাদ দিতে হয়।
এ পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপে নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করতে হয়-
ক) হস্তান্তর পাওনা যেমন- অবসর ভাতা, বেকার ভাতা, ত্রাণ ইত্যাদি জাতীয় আয় পরিমাপে বাদ দিতে হয়।
খ) অর্থের মাধ্যমে বিনিময়যোগ্য নয় এরূপ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম জাতীয় আয় হিসেবে বাদ দিতে হয়।
গ) অনুৎপাদনশীল ঋণের সুদ যেমন- যুদ্ধঋণের সুদ জাতীয় আয় পরিমাপে অন্তর্ভুক্ত হয় না।
ঘ) যৌথ মূলধনী কারবারের অবণ্টিত মুনাফা জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
ঙ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে নিট পাওনা ও নিট দেনা যথাক্রমে জাতীয় আয় পরিমাপে যোগ ও বিয়োগ করতে হয়।
চ) একই খাতের আয় একাধিকবার যাতে জাতীয় আয় পরিমাপে অন্তর্ভুক্ত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হয়।
৩। ব্যয় পদ্ধতি
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে একটি দেশের সকল প্রকার ব্যয়ের সমষ্টিকে ব্যয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় বলে। ব্যয় পদ্ধতিতে দ্বিখাতবিশিষ্ট অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি ভোগ ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যয় যোগ করে জাতীয় আয় পরিমাপ করা হয়।
ব্যয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়-
ক) হস্তান্তর পাওনা বাদ দিয়ে জাতীয় আয় এ পদ্ধতিতে পরিমাপ করতে হয়।
খ) অনুৎপাদনশীল ঋণের সুদ বাদ দিয়ে জাতীয় আয় পরিমাপ করতে হয়।
গ) পরোক্ষ কর বাদ দিতে হয়।
ঘ) অবচয় বাদ দিতে হয়।
ঙ) শ্রম ব্যতীত প্রাপ্ত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম পাওয়া গেলে তা বাদ দিতে হয়।