জাতীয় আয় পরিমাপের সমস্যা
একটি দেশে জাতীয় আয় পরিমাপে কিছু বাস্তব সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যাগুলো নিম্নরূপ-
১। দ্বৈত গণনা সমস্যা
জাতীয় আয় পরিমাপে একই দ্রব্য একাধিকবার গণনা করলে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন- তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে কাপড় উৎপাদন হলে তুলা, সুতা ও কাপড়ের মূল্য জাতীয় আয় পরিমাপে গণনা করা হলে সঠিক জাতীয় আয় পাওয়া যাবে না।
২। সঠিক তথ্য-উপাত্তের অভাব
সঠিক তথ্য ও উপাত্তের অভাবে জাতীয় আয় সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় না। অনেক সময় উৎপাদনকারী তার আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদির সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করে না। এ কারণে সঠিক তথ্য-উপাত্তের অভাব দেখা দেয়।
৩। অবিক্রিত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা
অবিক্রিত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের মূল্য নিরূপণ করা কঠিন। তাছাড়া এসব দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম কোন বছরে উৎপাদিত হয়েছে সেটি নির্ধারণ করা কঠিন এবং উক্ত বছরের মূল্যকে পরবর্তী মূল্যের সাথে সমন্বয় করা কঠিন।
আরও পড়ুন: জিডিপি কি? জিডিপি ও জিএনআই এর মধ্যে পার্থক্য
৪। কম গণনার সমস্যা
উৎপাদনকারীরা উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী নিজস্ব ভোগে ব্যবহার করলে তা জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত হয় না। ফলে জাতীয় আয় কম হয়।
৫। শ্রেণীবিন্যাসের সমস্যা
কৃষি ও শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর কোনটি মাধ্যমিক, কোনটি চূড়ান্ত পর্যায়ের তা নির্ধারণ করা এবং শ্রেণিবিন্যাস করা একটি জটিল বিষয়।
৬। ক্ষয়-ক্ষতিজনিত ব্যয়
জাতীয় আয় পরিমাপে মূলধনী দ্রব্যের ক্ষয়-ক্ষতিজনিত ব্যয় নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। এ কারণে জাতীয় আয় পরিমাপে সমস্যায় পড়তে হয়।
৭। মূল্যস্তরের পরিবর্তনজনিত সমস্যা
মূল্যস্তরের পরিবর্তন ঘটলে জাতীয় আয় পরিমাপে অসুবিধায় পড়তে হয়। মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রা সংকোচন দেখা দিলে জাতীয় আয় বেশি বা কম হয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত জাতীয় আয় হিসাব করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৮। অঘোষিত আয়
অনেক পেশাতে চাকরির পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্র্যাকটিসের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকে। যেমন- সমাজে ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী ইত্যাদি পেশাজীবী অতিরিক্ত আয় করে থাকে। তাদের আয় অনেক সময় ঘোষিত হয় না। তাই জাতীয় আয় পরিমাপ সঠিক হয় না।
৯। কর ফাঁকির প্রবণতা
জনগণের কর ফাঁকির প্রবণতা থাকলে তাদের আয়ের সঠিক পরিমাপ হয় না। ফলে জাতীয় আয় পরিমাপ সঠিক হয় না।
১০। পেশাগত বিশেষীকরণের অভাব
পেশাগত বিশেষীকরণের অভাবে জাতীয় আয় পরিমাপে সমস্যা সৃষ্টি হয়। একই ব্যক্তি একাধিক পেশায় নিয়োজিত থাকলে বিভিন্ন পেশার আয় সঠিকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায় না।
১১। বিদেশ থেকে প্রেরিত আয়
অলিখিত ও বৈধ পথ বহির্ভূতভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে যে আয় আসে তা জাতীয় আয় হিসাব বহির্ভূত থেকে যায়।
১২। ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের মূল্য নিরূপণ
আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের মূল্য নিরূপণ করা কঠিন। ফলে জাতীয় আয় কম-বেশি হয়।
১৩। হস্তান্তর পাওনা
হস্তান্তর পাওনার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। ফলে জাতীয় আয় পরিমাপ কঠিন হয়ে পড়ে।
১৪। অবণ্টিত মুনাফা
যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠানে মুনাফার একাংশ অবণ্টিত থাকে। এ অবণ্টিত মুনাফা সতর্কতার সাথে যোগ করতে হয়। অবণ্টিত মুনাফার সঠিক হিসাব না পেলে জাতীয় আয় পরিমাপ সঠিক হয় না।
১৫। দুর্নীতি
দুর্নীতি একটি দেশের জাতীয় আয় সঠিকভাবে পরিমাপের অন্তরায়। ঘুষ, মজুদদারি, চোরাচালানি, ফটকা ব্যবসায় ইত্যাদি বেআইনি কার্যকলাপ অর্থনীতিতে কালো টাকা ছড়িয়ে দেয়। এসব অর্থের হিসাব জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত হয় না। ফলে সঠিকভাবে একটি দেশের জাতীয় আয় পরিমাপ করা যায় না।
১৬। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অধঃমূল্যায়ন ও উর্ধ্বমূল্যায়ন এর মাধ্যমে দ্রব্যসামগ্রীর দাম যথাক্রমে হ্রাস ও বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে জাতীয় আয় পরিমাপের জটিলতা সৃষ্টি হয়।
১৭। পরোক্ষ কর
অনেক সময় পরোক্ষ কর জাতীয় আয় পরিমাপে সমস্যা সৃষ্টি করে। পরোক্ষ কর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে আর এ বর্ধিত মূল্যে জাতীয় আয় পরিমাপ করলে সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না।