শিল্প বিরোধের কারণ
শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে প্রায়ই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে সুসমন্বয় প্রতিষ্ঠিত হয় না। ফলে এ দুটি পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে, যা পরবর্তীতে শিল্প বিরোধের আকার ধারণ করে। শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে শিল্প বিরোধের কারণ অনেকগুলো।
নিম্নে প্রধান প্রধান শিল্প বিরোধের কারণ গুলো তুলে ধরা হলো-
ক. অর্থনৈতিক কারণ
১. বেতন ও মজুরি: শ্রমিকদের মজুরি যখন ন্যায়সংগত মজুরির চেয়ে কম ধার্য করা হয়।
২. ভাতাদি: মজুরির সাথে ওভারটাইমের ভাতাদিসহ অন্যান্য ভাতাদি যেমন- চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা ইত্যাদি সন্তোষজনক না হয়।
৩. বোনাস: বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে, বা বছর শেষে বা উৎসবকালীন সময়ে বোনাস প্রত্যাখ্যান হলে।
৪. মুনাফায় অংশগ্রহণ: মুনাফা থেকে শ্রমিকরা অংশবিশেষ পেতে উপেক্ষিত হলে।
৫. অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি: পেনশন, বীমা, ঋণ সুবিধা ইত্যাদি সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত হলে।
আরও পড়ুন: শিল্প বিরোধ বলতে কী বুঝায়? শিল্প বিরোধের ধরন আলোচনা কর।
খ. সাংগঠনিক ও শ্রমিক কল্যাণ সংক্রান্ত কারণ
১. অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ীকরণ: অস্থায়ী কর্মীদের নির্দিষ্ট সময় শেষে ছাঁটাই না করে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে।
২. চাকরির নিরাপত্তা: কর্মী ছাঁটাই, বদলি, পদাবনতি, বরখাস্ত ইত্যাদি কারণ।
৩. উত্তম কার্য পরিবেশ: অনুন্নত কার্য পরিবেশ থেকে উন্নত কার্য পরিবেশের দাবিতে।
৪. কাজের সময়: অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় কাজের জন্য।
৫. বিনোদন ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থা: শ্রমিকদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য আনন্দ উৎসব, খেলাধুলা, বার্ষিক ভোজ, বিচিত্রানুষ্ঠান ইত্যাদির ব্যবস্থা না থাকলে।
৬. ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অন্যায় আচরণ: শ্রমিকদের সাথে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অন্যায় আচরণ।
গ. ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কারণ
১. ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ: ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা না থাকলে।
২. শ্রমিক সংঘ গঠনে বাধা: শ্রমিক সংঘ গঠনে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে।
৩. চুক্তিভঙ্গ: বিভিন্ন বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ হলে।
৪. অন্যায় আচরণ: উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক কর্তৃক অধীনস্ত কর্মী অন্যায় আচরণের শিকার হলে।
৫. বৈষম্যমূলক আচরণ: কর্মী নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, ছাঁটাই, অবসর গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে বৈষম্য সৃষ্টি হলে।
ঘ. রাজনৈতিক কারণ
১. রাজনৈতিক নেতৃবর্গের প্রভাব: শিল্পে রাজনৈতিক নেতৃবর্গের হস্তক্ষেপ।
২. সরকার বিরোধী আন্দোলন: সরকার বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক সংঘ জড়িয়ে পড়লে।
৩. দাবি-দাওয়ার প্রতি সমর্থন: এক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার প্রতি অন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সমর্থন।
৪. শ্রমিক সংঘের সাথে মতবিরোধ: শ্রমিক সংঘের সাথে ব্যবস্থাপনার মতবিরোধ।
ঙ. মনস্তাত্ত্বিক কারণ
১. ভুল ধারণা: শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে পরস্পর ভুল ধারণা। (মজুরি, দাবি-দাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে)
২. যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা: বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা ঘটলে।
৩. পরিবর্তনের প্রতি অনীহা: নতুন প্রযুক্তি ও কলা কৌশলগত পরিবর্তনে শ্রমিকদের অনীহা।
৪. মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে অনভিজ্ঞতা: ব্যবস্থাপকগণের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে অনভিজ্ঞতার জন্য।
৫. আঞ্চলিকতার দম্ভ: বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকদের মাঝে আঞ্চলিকতার দরুণ সৃষ্ট বিরোধ।