Home » এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন? রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাঁর অবদান

এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন? রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাঁর অবদান

by TRI

কেন এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়?

মহান গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পৃথিবী ব্যাপী পরিচিত। তিনি ছিলেন প্লেটোর শিষ্য।

এরিস্টটল গ্রিক রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অশান্ত অধ্যায়ে খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে এথেন্স প্রদেশের স্টাগিরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নিকোমেকাশ ছিলেন ম্যাসিডন অধিপতির চিকিৎসক।

এরিস্টটল তাঁর পিতার সাথে চিকিৎসাশাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করেন। ১৮ বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হলে এরিস্টটল এথেন্সে গিয়ে প্লেটোর একাডেমির ছাত্র হন। প্লেটোর ন্যায় যোগ্য শিক্ষকের ছাত্র হওয়ার সুযোগ লাভ করে তিনি তাঁর চিন্তা রাজ্যকে অধিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার সাথে বিবেচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর অতুলনীয় পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Politics“-এ।

এরিস্টটলই রাজনীতিকে সর্বপ্রথম একটা স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দান করেন। এজন্য তাঁকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

সম্পর্কিত বিষয়

 প্লেটোর দার্শনিক রাজার বৈশিষ্ট্য

 প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্ব বা ন্যায়তত্ত্ব আলোচনা কর

 কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কাকে বলে? কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরিস্টটল এর অবদান

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরিস্টটল এর অসাধারণ অবদানের জন্যও তাঁকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তাঁর প্রতিভা ছিল বিভিন্নমুখী এবং জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরিস্টটলের অন্যান্য অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

১. সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান

এরিস্টটল সর্বপ্রথম রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে নীতিশাস্ত্র থেকে পৃথক করে একটি পৃথক বিজ্ঞানের মর্যাদা দান করেন। তিনি গ্রিক রাজনীতির অধ্যয়নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আরোপ করেন ও একে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত করেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান অর্থাৎ “Master of Science” বলে অভিহিত করেন। বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞান তাঁরই সুচিন্তিত ও বৈজ্ঞানিক প্রজ্ঞার ফলস্বরূপ।

২. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা

সরকারের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিতে এরিস্টটল সম্পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে, শাসনক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রের সূচনা অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাই তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবর্তন করে সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করতে সচেষ্ট হন।

৩. বিপ্লব তত্ত্ব

এরিস্টটলের মতে, মানুষ যখন তার ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত হয় তখনই সে বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিপ্লব সম্পর্কিত তাঁর এ ধারণা আজও অম্লান হয়ে আছে। তাছাড়া বিপ্লবের প্রতিরোধ এবং রাষ্ট্র ও সরকারের স্থায়িত্ব রক্ষার যেসব উপায়ের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন তার গুরুত্ব আজও হ্রাস পায় নি।

৪. নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তক

এরিস্টটল আইনের শাসন ও শাসনতান্ত্রিক আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন জনগণের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব। কারণ আইন যেখানে শাসন করে না সেখানে কোন শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকে না।

৫. আইনের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা

এরিস্টটল ব্যক্তিগত সার্বভৌমত্বের চেয়ে আইনের সার্বভৌমত্বকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব কোন ব্যক্তি দিতে পারে না, তা সে যতই শক্তিশালী হোক না কেন। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিহিত থাকে আইনের মধ্যে। এ ধারণা হতে সার্বভৌমত্বের আধুনিক ধারণা জন্মলাভ করে।

৬. রাষ্ট্রের লক্ষ্য নির্ধারণে

রাষ্ট্রের লক্ষ্য নির্ধারণে তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্রের প্রধান ও পবিত্রতম লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিকদের জন্য উন্নততর ও কল্যাণকর জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করা, জ্ঞানের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করা ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধন করা।

৭. শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

এরিস্টটল এর মতে, শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা যায়। একথা আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়ে আছে। তাঁর মতে, রাষ্ট্রের লক্ষ্য হল আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা। নাগরিকদের মহত্তর জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করা।

৮. রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে ধারণা

এরিস্টটলই প্রথম রাষ্ট্রচিন্তাবিদ যিনি অত্যন্ত যৌক্তিকতা ও দক্ষতার সাথে সরকার ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। তিনিই প্রথম বলেছেন যে সরকার পরিবর্তনশীল কিন্তু রাষ্ট্র স্থায়ী প্রতিষ্ঠান।

৯. আইনের শাসনের প্রাধান্য

রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এরিস্টটল এর সবচেয়ে বড় অবদান হল আইনের শাসনের প্রাধান্য। প্লেটো যেমন একজন দার্শনিক রাজাকে আদর্শ রাষ্ট্রের শাসক হিসেবে কল্পনা করেছেন, তেমনি এরিস্টটল আইনের শাসনকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

১০. ব্যক্তিস্বাধীনতা ও রাষ্ট্র

তিনি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যে একটি সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও ব্যক্তির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। কেননা, একটি অন্যটির পরিপূরক।

১১. কল্যাণমূলক রাষ্ট্র

এরিস্টটল সর্বপ্রথম কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা প্রদান করেন। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের অন্তর্গত সকলের তথা সকল পরিবারের জন্য উত্তম জীবনযাপন করা।

১২. স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা

উন্নয়নের জন্য বর্তমানে স্থিতিশীল সরকারের দাবি অনস্বীকার্য। আর এরিস্টটল স্থিতিশীল সরকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এভাবে, “একটি রাষ্ট্র ততদিন টিকে থাকতে পারে, যতদিন সেখানে তার সরকার টিকে থাকতে সমর্থ হয়।”

Related Posts