Home » রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে নীতিবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে নীতিবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

নীতিশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক নির্ণয় কর।

by TRI

সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম দু’টি শাখা হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞানের মাঝে রয়েছে সুনিবিড় সম্পর্ক। কেননা, দু’টি শাখাই মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে অনন্য ভূমিকা পালন করে। অধ্যাপক Mackenzie এর মতে, “আচার আচরণের ভালমন্দের আলোচনাই হল নীতিশাস্ত্র।” অপরপক্ষে Lord Acton এর অভিমত অনুসারে, “সরকারের কার্যাবলির ঔচিত্য অনৌচিত্য সংক্রান্ত আলোচনাই হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মুখ্য বিষয়।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্ক

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে নিম্নে বিস্তারতি আলোচনা করা হল-

১। পরিচয়গত সম্পর্ক

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা বর্ণনায় অধ্যাপক ই.এম. হোয়াইট বলেছেন- “রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সেই শাখা; যা রাষ্ট্রীয় জীবনের যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে।” আর নীতিবিজ্ঞানীদের মতে, নীতিবিজ্ঞান হল এমন শাস্ত্র যা মানুষের ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত ও উন্নত-অনুন্নত দিক নিয়ে আলোচনা করে। উভয় শাস্ত্রের সংজ্ঞাগত পরিচয়ে যথেষ্ট সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

ম্যাসেজ: ড. মিজানুর রহমান আজহারি - Message : Dr. Mizanur Rahman Azhari

TK. 300

২। উদ্দেশ্যগত সম্পর্ক

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি স্থাপন করা। এজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজে ন্যায়নীতি ও সুস্থ জীবনবোধ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকে। অন্যদিকে, নীতিশাস্ত্রের উদ্দেশ্য হল মানুষকে নীতিবান হিসেবে গড়ে তোলা। এজন্য নীতিবিজ্ঞান ন্যায়নীতি ও উত্তম আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাতে প্রচেষ্টা চালায়। উভয়ের উদ্দেশ্য প্রায় একই। সুতরাং, উভয়ের মধ্যকার উদ্দেশ্যগত সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ়।

৩। শিক্ষাগত সম্পর্ক

রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রে সুনাগরিক তৈরির জন্য মানুষকে সুনাগরিকের গুণাবলি; যেমন- বুদ্ধি, আত্মসংযম, প্রজ্ঞা, ন্যায়নিষ্ঠা ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে থাকে। আর নীতিবিজ্ঞান নীতিবান মানব তৈরির উদ্দেশ্যে মানুষকে সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, সহনশীলতা, পরোপকার ইত্যাদির শিক্ষা দান করে থাকে। সুতরাং উভয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত কাছাকাছি।

আরও পড়ুন:  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

৪। বিষয়বস্তুগত সম্পর্ক

নাগরিকতা ও রাষ্ট্র হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। অর্থাৎ, মানুষের রাষ্ট্রীয় জীবনই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়। অন্যদিকে, নীতিবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় হল মানুষের প্রাত্যহিক জীবন। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ভালোমন্দ নিয়ে নীতিবিজ্ঞান ব্যাপক আলোচনা করে। মানুষের রাষ্ট্রীয় জীবন প্রাত্যহিক জীবন থেকে আলাদা নয়। সুতরাং, এদিক থেকেও উভয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।

৫। পটভূমিগত সম্পর্ক

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সূচনায় নীতিবিজ্ঞানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। মানুষের নৈতিকতা উন্নয়নের জন্যই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে। যেমন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন প্রণয়ন করা হয় কেবল মানুষের মূল্যবোধ রক্ষা করার নিমিত্তে। অনুরূপভাবে নীতিবিজ্ঞানের সূচনায়ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। নীতিবিজ্ঞানের সূচনা হয় মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য, যা নীতিবিজ্ঞানের অন্যতম উপাদান। সুতরাং উভয়ের মাঝে পটভূমিগত সম্পর্ক বিদ্যমান।

৬। ভিতর-বাহির সম্পর্ক

নীতিশাস্ত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় প্রাচীন। নীতিশাস্ত্র মানুষকে মানুষ হিসেবেই বিচার বিবেচনা করে, অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষকে দেখে নাগরিক হিসেবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষেল কার্যকলাপ ও আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আর নীতিবিজ্ঞান মানুষের আভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং, উভয়ের মধ্যে অন্তর-বাহির সম্পর্ক বিদ্যমান।

৭। অন্যান্য

রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিকদের সততা, নিষ্ঠা, ন্যায়নীতি ইত্যাদি শিক্ষা প্রদান করে তাদের যাবতীয় অন্যায় ও গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখে এবং তাদেরকে সুনাগরিক হতে সহায়তা করে। অনুরূপভাবে নীতিবিজ্ঞানও মানব জাতিকে ন্যায়নীতি, সততা ইত্যাদি শিক্ষা দান করে। ন্যায়ের ভিত্তিতে মানুষের যাবতীয় আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে আদর্শ মানব হতে সাহায্য করে।

পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞান মানবকল্যাণে ব্রতী দু’টি শাস্ত্র। উভয়েরই উদ্দেশ্য মানব জাতির কল্যাণ সাধন করা। তাই একটি অপরটির সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

Related Posts