প্রকৃতপক্ষে জননীতি হল জনগণের কল্যাণে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ যা জনগণের কাছ থেকে উত্থাপিত হয় এবং সরকারের মাধ্যমে পূরণ হয়।
বস্তুত জননীতির প্রসার নির্ধারিত হয়েছে একপ্রকারের ভূমিকা দ্বারা যা রাষ্ট্র নিজের জন্য সমাজে গ্রহণ করেছে। প্রাচীন পুঁজিবাদী সমাজে রাষ্ট্র খুব সীমিত ভূমিকা পালন করতো এবং ধারণা করা হতো যে রাষ্ট্র শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সমাজের নিয়ামক হিসেবে কাজ করতো, এর প্রবর্তক হিসেবে নয়।
উন্নয়নের পরিকল্পিত ধারণার আবির্ভাব অনুযায়ী রাষ্ট্র বিভিন্ন কাজে সমাজকে বর্ধিত করতে এবং আকার প্রদান করতে সক্রিয় মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছিল। এটি রাষ্ট্রের ভূমিকায় এক বিরাট পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। জননীতি তার প্রসার ঘটিয়েছে শুধু উন্নয়নের নীতি থেকে।
আরও পড়ুন: জননীতি বিশ্লেষণ কী? নীতি বিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্য, ধরণ ও উপাদান
সুতরাং যেকোন দেশের জননীতির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো আর্থসামাজিক উন্নয়ন। শিল্প এবং কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহৎ নীতিগুলো গঠিত হয়। অনেক নীতিই লিখিত আইনে রূপান্তরিত হয়। যেমন- শিল্প উন্নয়ন নীতি, নিয়মতান্ত্রিক শাসনধারা অথবা ভূমি প্রজাস্বত্ব আইন। অন্যগুলো বিস্তারিত নির্দেশ হিসেবে বিভিন্ন নীতির প্রমাণাদির মধ্যে রয়েছে। সকল নীতি নির্দেশের জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সবচাইতে বড় উৎস। এ নীতিগুলো থাকে দুই ধরনের; একটি প্রবিধান এবং অপরটি প্রচার। আইনটি বলে দেয় উদ্যোক্তারা কি করতে পারবে এবং কি করতে পারবে না। যেমন- কোন ধরনের পণ্য জনগণ উৎপাদন করতে পারবে এবং কোনগুলো সরকারি সংস্থা দ্বারা উৎপাদিত হবে। আইন এটিও নির্দিষ্ট করে দেয় যে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ইত্যাদির মতো কোন সেবাগুলো সরবরাহ করবে। রাষ্ট্র সামাজিক ক্ষেত্রেও একই ধরনের দায়িত্বভার নিয়ে থাকে। যৌতুক আইন, বিবাহবিচ্ছেদ আইন এগুলোকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন শুধু আর্থসামাজিক সমস্যাই একমাত্র সমস্যা ছিল না। জাতীয় অখণ্ডতার সমস্যাও ছিল; বাহ্যিক পরিবেশ ও বিপদের উৎস ছিল এবং দেশকে নিজের প্রতিরক্ষার জন্য উপযুক্ত নীতির উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের জননীতি গঠিত হয়েছিল আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য এবং জাতীয় অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য। এ লক্ষ্যগুলো সুসংগত নীতির জটিল দাবিতে পরিণত হয়েছিল। এটি একটি কঠিন কাজ ছিল; কারণ উদ্দেশ্যগুলো বিভিন্ন শাখা-উপশাখায় বিভক্ত ছিল।
অনেক সময় প্রকৃতিগত বা বৈশিষ্ট্যগত কারণে নীতিগুলো পরস্পর বিরোধী হয়েছিল; যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যৌক্তিক হতে পারে, কিন্তু জাতীয় অখণ্ডতার জন্য অযৌক্তিক। তাই বাহ্যিক