মিনোব্রুক সম্মেলন লোকপ্রশাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন। যা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে লোকপ্রশাসনের বর্তমান অবস্থান নিরুপণ এবং সাম্প্রতিক প্রবণতা। এর একটি পরিকল্পিত প্রভাব রয়েছে লোকপ্রশাসনের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে। মিনোব্রুক সম্মেলন প্রতি বিশ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়। এর স্থায়িত্বকাল হয় ২-৩ দিন। Syracuse University এর Minnowbrook Conference Centre – এ অনুষ্ঠিত হয় বলে এটি মিনোব্রুক সম্মেলন নামে পরিচিত।
মিনোব্রুক সম্মেলনের প্রেক্ষাপট:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাধারণ গতানুগতিক লোকপ্রশাসন জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছিল। এসময় গতানুগতিক লোকপ্রশাসনকে সংস্কার করা একান্ত অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এ পরিপ্রক্ষিতে একটি কমিশন, The Honey Report on Higher Education for Public Service, ১৯৬৭ এবং একটি সম্মেলন, Theory and Practice on Public Administration, ১৯৬৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এর সূত্র ধরেই মিনোব্রুক সম্মেলন ১, ২, ৩ অনুষ্ঠিত হয়।
মিনোব্রুক সম্মেলন – ১:
লোকপ্রশাসনের ভবিষ্যত নিযে যে কয়েকজন মনীষী সচেতন ছিলেন তাদের মধ্যে Dwight Waldo ছিলেন অন্যতম। তিনি সকল প্রভাষক ও ছাত্রদেরকে লোকপ্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মার্টিন লুথার কিং হত্যা, রবার্ট কেনেডি হত্যা, চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন প্রভৃতি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্থবিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ৩৪ জন পুরুষ স্কলার যাদের বয়স ৩৫ এর উর্ধ্বে এবং যারা রাজনৈতিক বিজ্ঞানী হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তারা এই সম্মেলনে একত্রিত হয়।
এই সম্মেলনে লোকপ্রশাসনের Value Free approach এর পরিবর্তে Normative Approach কে সমর্থন করা হয়।
মেইন ফোকাস:
সামাজিক সমতা, আমলাতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং নব্য লোকপ্রশাসন।
মূল থিম:
১) লোকপ্রশাসনের প্রাসঙ্গিক বা সংশ্লিষ্ট দিকসমূহ।
২) সামাজিক পরিবর্তন ও প্রশাসনিক উপযোগীতাকরণ।
৩) সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে লোকপ্রশাসনের সম্পর্ক।
৪) লোকপ্রশাসনের Normative Approach
৫) লোকপ্রশাসনের Moral Enterprise আলোচনা।
৬) অ্যান্টি ব্যুারোক্রেসি এবং অ্যান্টি হায়ারাইকিয়াল।
৭) লোকপ্রশাসনের গণতন্ত্রীকরণ।
৮) রাজনীতি প্রশাসন দ্বৈতবাদ প্রত্যাখ্যান।
৯) সামাজিক সমতা।
১০) লোকপ্রশাসনের সাবজেক্ট হিসেবে Socio Emotional Mood.
প্রথম মিনোব্রুক সম্মেলনে নব লোকপ্রশাসনে ৫টি মূল লক্ষ্য ও ফোকাসের কথা বলা হয়েছে। যথা-
- Less generic and more public
- Less descriptive and more perspective
- Less institutionalize and more client oriented
- Less neutral and more normative
- Major focus on NPM
মিনোব্রুক সম্মেলন – ২:
Fredrikson ছিলেন মিনোব্রুক – ২ সম্মেলনের উদ্যেক্তা। যা ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ৪ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলন লোকপ্রশাসনের ক্ষেত্রে বিশেষ এক ধরণের পরিবর্তন আনয়নের পক্ষে যুক্তি দ্বার করিয়েছিল। এছাড়া সামাজিক সমতাকে মিনোব্রুক – ২ সম্মেলনে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সামাজিক সমতাকে লোকপ্রশাসনের তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এ সম্মেলনে।
মিনোব্রুক সম্মেলন – ২ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যেমন-
১) আইনের শাসন
২) আমলাদের নৈতিক মূল্যবোধ
৩) শিক্ষিত ও মেধাবী আমলাতন্ত্র
৪) সামাজিক সমতা
আরও পড়ুন: সরকারি নীতি কি? সরকারি নীতি প্রণয়নে আমলাদের ভূমিকা
মিনোব্রুক সম্মেলন – ৩:
সেপ্টেম্বর ৩-৭,২০০৮, প্রফেসর Rosemary O’ Leary এর অধীনে মিনোব্রুক সম্মেলন – ৩ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে, লোকপ্রশাসন, লোকপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা, সরকারি সেবা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এটি দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।
এই সম্মেলনে লোকপ্রশাসনের মূল্যবোধ, সামাজিক সমতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সামাজিক বিষয় এবং মৌলিক বিষয়গুলোর পার্থক্য:
তিনটি সম্মেলনই লোকপ্রশাসনকে নতুন ধারায় উপস্থাপিত করার কথা বললেও এদের মধ্যে সামাজিক বিষয় ও মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হল-
১) প্রেক্ষাপটগত:
তিনটি সম্মেলনই প্রেক্ষাপটগত দিক থেকে ভিন্নতা বজায় রেখেছে।
প্রথম সম্মেলন হয়েছে জনগণের চাহিদা পূরণ হচ্ছিলনা বলে। দ্বিতীয় সম্মেলনটি হয়েছিল যখন আমেরিকার আর্থিক দিকটা অনেক শক্তিশালী ছিল। আর তৃতীয় সম্মেলনটি হয়েছে যখন আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল এবং বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছিল। সুতরাং তিনটি সম্মেলনই প্রেক্ষাপটগত দিক থেকে আলাদা।
২) উদ্দেশ্যেগত:
প্রথম মিনোব্রুক সম্মেলন ছিল গতানুগতিক প্রশাসন অপেক্ষা নতুন লোকপ্রশাসনকে বেশী কার্যকরী করা। দ্বিতীয় সম্মেলনে বলা হয়, প্রশাসনের ব্যয় কমাতে হবে। তৃতীয় সম্মেলনের উদ্দেশ্য বিদ্যমান লোকপ্রশাসনকে সংস্কার করে নতুন একটি প্রশাসন গড়ে তোলা যেখানে সামাজিক ন্যায় বিচারসহ সেবার মানসিকতা থেকে প্রশাসনকে সাজানো।
৩) ব্যবস্থাপনাগত:
প্রথম সম্মেলনে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা না হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্মেলনে ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৪) নৈতিকতা:
নৈতিকতা হচ্ছে লোকপ্রশাসনের অন্যতম একটি Value, যা দ্বারা প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট না হতে পারে। এটিই ছিল প্রথম সম্মেলনের অন্যতম বাণী।
কিন্তু দ্বিতীয় সম্মেলনে সেবা গ্রহীতাকে ‘Client’ বা ’Customer’ হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয় সম্মেলনে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
৬) জবাবদিহিতা:
১ম ও ২য় সম্মেলনে জবাবদিহিতা এত গুরুত্ব না পেলেও ৩য় সম্মেলনে এটি অধিক গুরুত্ব লাভ করেছে।